ঢাকা: ইস্ট লন্ডনের পপলার ইউনিয়ন আয়োজিত আউটসাইড ইন আর্টস ফেস্টিভ্যালে সম্প্রচারিত কবিতা, সংগীত, অভিনয় ও নৃত্যের বিনিময়মুখী এবং সমবায়ী পরিবেশনা ‘লেটারস টু গড’ এর পর ইউরোপে ভারতীয় মার্গ এবং বিশ্ব সংগীতের শীর্ষ সংগঠন সৌধের ব্যবস্থাপনায় অচিরেই মুক্তি পাচ্ছে কবিতা এবং সংগীতের বিশেষ প্রযোজনা ‘অ্যা টাচ অব সেনসুয়ালিটি’। কবি টি এম আহমেদ কায়সারের পরিচালনায় ইতোপূর্বে সম্প্রচারিত লেটারস টু গড নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্বের নানা দেশের শিল্পানুরাগী দর্শক।
লেটারস টু গডে বিশেষ অঞ্জলি ও আরাধনা নৃত্য পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কত্থক শিল্পী সঙ্গীতা চ্যাটার্জি। এই নৃত্যের নেপথ্য সংগীত রচনা করেছেন বিখ্যাত জাজ মিউজিশিয়ান ও পিয়ানিস্ট উইল লাওটন। করোনা সংকটের ওপর রচিত টি এম আহমেদ কায়সারের কথা ও রাগ দেশে সুরারোপিত কম্পোজিশনে একটি বিশেষ সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন কলকাতার মেধাবী শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী কোয়েল ভট্টাচার্য। সঞ্জয় মিশ্রের কথায় সুরারোপ ও সংগীত পরিবেশন করেছেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী পদ্মশ্রী ড. সোমা ঘোষ। ইরানিয়ান কবি ও সংগীতশিল্পী নিকনাজ মীরগালামীর ক্যালিগ্রাফি, কথা এবং সংগীতের সমন্বয়ে একটি অভিনব উপস্থাপনা এতে যোগ করেছে বিশেষ মাত্রা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’ গীতিকবিতার বাংলা এবং ইংরেজি পাঠ করেন যথাক্রমে আবৃত্তিশিল্পী চন্দ্রিমা রায় এবং গল্পকার শ্রী গাঙ্গুলী। শিশুশিল্পী তানিশা চৌধুরী, আনভিতা গুপ্ত, আনায়া নিরভানার অভিনয় এবং কথা পুরো পরিবেশনায় এক হৃদয়স্পর্শী আবহ তৈরি করেছে। পুরো আয়োজনের নেপথ্য যন্ত্রসংগীত রচনা করেছেন তরুণ সিতার মায়েস্ট্রো রামপ্রপন্ন ভট্টাচার্য। ভিডিও সম্পাদনা এবং সৃজনশীল সহোযোগিতায় ছিলেন নীল মালাকার।
লেটারস টু গডের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা জানিয়েছেন কবি, সংগীতশিল্পী, সংগীতজ্ঞসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পামোদী দর্শক। কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক কবি ও কথাশিল্পী ক্লেয়ার পটার এক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই বিশেষ ভিজ্যুয়াল প্রোডাকশন আমার নিজের ত্বক এবং হাড়ের অস্তিত্ব ভুলিয়ে দিয়ে একান্ত সত্তার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে প্রায়। কোভিডের এই ক্রান্তিলগ্নে কথা, সংগীত এবং দৃশ্যের এমন অভূতপূর্ব সমন্বয়ধর্মী পরিবেশনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাই।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও এশিয়ান কালচার ভালচারের সম্পাদক শৈলেশ রাম লেখেন, লেটারস টু গড সত্যিই অভূতপূর্ব। পরিবেশনারগুলোর প্রত্যেক মুহূর্তেই আমি অভিভূত হয়েছি। ভালোবাসা।
ইতালির প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও গবেষক ইগোর অরিফিসি লেখেন, ভক্তি, ভালোবাসা এবং সমর্পণের সমন্বয়ে এই অভূতপূর্ব পরিবেশনা দেখতে ও শুনতে অসম্ভব ভালো লেগেছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন।
কিউবার কবি এবং সংগীতশিল্পী স্নেজহিনা গুলুবোভা লেখেন, এই ক্রান্তিলগ্নে এমন একখানা অনন্যসাধারণ পরিবেশনার জন্য মনে মনে অপেক্ষায় ছিলাম।
করোনাকালে সৌধ ও গ্রন্থীর আয়োজনে সূচিত বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির সংগীতশিল্পী, কবি, চলচ্চিত্রকার, দার্শনিকদের পরিবেশনা এবং তাদের সঙ্গে গভীর অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ কথোপকথন সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। করোনাকালীন লকডাউনের সময় সৌধের নেতৃত্বে গত মার্চ মাস থেকে শুরু হয় ফেসবুক লাইভ সিরিজ এবং বিশ্বব্যাপী মনোজাগতিক-সংকটমুখী মানুষদের শিল্পের মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিক শুশ্রূষা প্রদানের এক দার্শনিক অভিযান। অনলাইন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সৌধের প্রযোজনা এবং কবি টি এম আহমেদ কায়সারের পরিচালনায় এখন নিয়মিতই মুক্তি পাবে কবিতা, সংগীত, নৃত্য এবং চিত্রকলার ভিজ্যুয়াল প্রোডাকশন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরের শেষে মুক্তি পাবে কবি ও গল্পকার শ্রী গাঙ্গুলী এবং কবি আহমেদ কায়সারের যৌথ পরিবেশনায় পার্থিব মোহ ও আনন্দ নিয়ে রচিত কবিতা, কথা ও গদ্য।
এ নিয়ে প্রোডাকশনগুলোর নির্দেশক ও সৌধ পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার জানান, করোনার ক্রান্তিলগ্নে আমরা শিল্পের নানারকম উদ্যোগ নিয়ে মানুষের নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হতে চেয়েছি। লকডাউনের শুরুতেই সৌধ প্রযোজিত অনলাইন অনুষ্ঠানমালা একদিকে যেমন পথিকৃতের ভূমিকা রেখেছে, অনুপ্রাণিত করেছে অন্যান্য শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনদের; অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও শিল্পের বিচিত্রমুখী, গভীর, শীর্ষমানসম্পন্ন পরিবেশনা এবং কথোপকথন বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে দর্শক, শিল্পী, আয়োজকসহ সব মহলে। আমরা এখন সঙ্গত কারণেই নতুন নতুন সব শিল্প প্রযোজনা নির্মাণ করে রেখে যেতে চাই আজকের এবং ভবিষ্যতের শিল্পানুরাগী দর্শকদের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২০
টিএ