কয়েকদিন আগে মেয়েটা একটা লাল ড্রেস পরে বাইরে বের হয়েছিলো। রাস্তায় তার চেয়ে বয়সে ছোট একটা ছেলে তাকে সেই ড্রেস নিয়ে টিজ করে।
সন্তানের প্রতি সব দায়িত্ব কর্তব্য পালনের দায় মেয়েদের একার। একজন পুরুষ খুব সহজেই সন্তানকে মায়ের ওপর ছেড়ে দিয়ে বাইরের কাজ করেন বা ঘুরতে যেতে পারেন, কিন্তু একজন মা তার সন্তানের সব দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন না কারো ওপর। যদি প্রয়োজনেও বের হন তো সেখানেও তার মুক্তি মেলে না। চিন্তা থাকেই। চাকরিজীবী এবং গৃহিণী প্রতক্যেটি নারীর জীবনে একই ঘটনা ঘটে। চাইলেও সে একা কোথাও বেড়াতে যেতে পারে না সংসার সন্তানের দায়িত্ব ফেলে অথচ নারীটিরও মন আছে। তারও ভালো লাগা খারাপ লাগা আছে। তারও ইচ্ছে করে চাঁদনী রাতে একা জ্যোৎস্না দেখতে। কেউ কেউ বলবেন এসব নারীবাদীদের কথা। আসলে নারীবাদীদের কথা না বলে যদি সাধারণ দৃষ্টিতে দেখি তবে একজন নারীর যত দায়িত্ব তা পুরুষকে পালন করতে হয় না।
নারীর নিরাপত্তার কথা যদি বলি তবে প্রথমেই তার পরিবার থেকে আসে তার ওপর হয়রানির থাবা। পরিবারে চাচা,মামা,ভাইয়ের বন্ধু এমন অনেকের হাতেই ছোটবেলায় মেয়েরা হয়রানির শিকার হন। যারা হননি তেমন হয়রানির শিকার তারা অবশ্যই ভাগ্যবান। এরপর স্বামীর সংসারেও মেয়েদের রেহাই মেলে না। স্বামীর হাতে কখনো অত্যাচারিত হচ্ছে আবার কখনো বা শাশুড়ি বা ননদের হাতে। মেয়েরা মেয়েদের শত্রু এই কথাটা যৌক্তিক। আমার এলাকায় একজন নারীর স্বামী মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এতে পাড়া প্রতিবেশী বেশ ক্ষিপ্ত হন তার প্রতি। কিন্তু এই একই ঘটনা যদি কোনো পুরুষের ক্ষেত্রে ঘটে তো সেটা স্বাভাবিক। নারী ডিভোর্সি বা বিধবা তাহলে তার সাজ-পোশাকে অধিকার নেই, তার সাধারণ জীবনযাপনে অধিকার নেই। আমি দেখেছি সমবয়সী একজন স্বামীহীন নারীকে অন্য একজন নারী তার সাজ পোশাক ও চলাফেরা নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আসলে আমাদের সমাজে স্বাভাবিকভাবে চলাটাকেই সবাই বাঁকা চোখে দেখে। সবাই খুঁজতে চায় নিশ্চয় ডিভোর্সি নারীটির অন্য কোনো সম্পর্ক আছে। সমাজ স্বামীহীন একাকী নারীর বৈধ বা অবৈধ কোনো সম্পর্কই মানতে পারে না। তারা চায় নারীটি একা থেকে সবার কাছে নিগৃহীত হোক। অন্যের অপমান দেখার নেশা যে বড় নেশা মানুষের।
বর্তমান সমাজ প্রেক্ষাপটে একজন মেয়ে ঘরে বাইরে স্বামীর সঙ্গে বা বাবা ভাই কারো সঙ্গেই সুরক্ষিত না। মেয়েরা বাইরে বেরোলে সবার চিন্তা আমার কন্যাটি ঠিকঠাক ঘরে ফিরবে তো! আজও মেয়েদের কারো সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলে চিন্তা করতে হয় ছেলেটি কী তার সম্পর্কের কথা বিশেষ মুহূর্তের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে। তাই সে ভয়ে অনেক ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখে আবার অনেক অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারে না।
নারীর ক্ষমতায়ন বলে যে ধারণাটি আমাদের সমাজে প্রচলিত তাও সেই সমাজ বা পুরুষের নির্ধারিত। যতটুকু তারা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ততটুকুই স্বাধীনতা নারী ভোগ করে। নারীর প্রতি সহিংসতা বহু পুরোনো। বর্তমানে আরেকটা সহিংসতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে তাদের জন্য তা হলো ডিজিটাল ফাঁদ বা অনলাইন প্রতারণা। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়েরা কিছু গ্যাং, গ্রুপ বা ছেলেদের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ফেলছে। সেসব গ্যাং বা ছেলেরা এমন এক বলয় তৈরি করে যাতে মেয়েরা তাদের সর্বস্ব খুইয়ে ফেলছে। এখন আপনি বলবেন তাদের তো দোষ আছে কেনো এমন ফাঁদে পা দিচ্ছে মেয়েরা। আসলে মেয়েরা বিশ্বাস করে ফেলে সহজেই। এটা প্রকৃতিপ্রদত্ত, মেয়েরা সহজ সরল আর হঠাৎই তারা জড়িয়ে পড়ে এমন সব জালে।
মেয়েদের জন্য সুরক্ষিত হোক আমাদের পৃথিবী। বাসযোগ্য হোক সংসার। নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হোক। নারী স্বাধীনভাবে চলুক বাসে ট্রেনে। আর কেউ তার ওড়না ধরে না টানুক। আর কেউ নারীর পথ আগলে দাঁড়িয়ে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ না করুক। নারী বাঁচুক তার আপন সত্তায়। নারীর জন্য পৃথিবী হোক ভয়হীন।
তৃপ্তি সেন, সহকারী শিক্ষক (বাংলা), বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, নির্ঝর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২০
এএটি