১. ইল্যুশন
ফোটন কণার স্রোতে নিমজ্জিত আমি।
ডুবে ডুবে নিউরন পান করি।
আলোকগহ্বরে ঘুমিয়ে গেলেও
জেগে উঠি দ্বিতীয় জগতে। সব অসম্ভবকে
সম্ভব করে তুলি।
যে পাডুকোনকে বিপুল চাওয়া সত্ত্বেও
পাওয়া হয়নি প্রথম জগতে, পেয়ে যাই অনায়াসে।
ফোটনের ছোটাছুটিতে সম্বিত ফেরে।
‘অলীক’ শব্দটি সেই সময়কালে জন্ম নিল।
এক স্ফীতোদর মায়াময় পুকুর।
২. সেলাই করা মুখ
সশব্দে বাক্যগুলো মূলচ্যুত
নির্বাক মুখে আশ্রয়
মেলে না
তাই
ক’ দেখি বাক ক’ দেখি বাক ক’ একটা
শুশুকের ভয় ছড়ায় শাসক
সু সুখের লাগি
চোখে চোখ নয় আজ
চোখে জোঁক
রাজার সুমতি হোক বা না হোক
মানুষের মস্তিষ্ক ফুঁড়ে বেরোক
সশব্দ বাক্যমালা অনুচ্ছেদ
অন্তিম দৃশ্যের নাটক
মাথাবেচা নির্বেদ।
৩. দেখাদেখি
আকাশ কখনও আকাশ দেখেনি
ঈশ্বর কখনও ঈশ্বরকে
আমি কখনও আমাকে দেখিনি
তুমি কখনও তোমাকে।
আকাশ কেবল জমিন দেখে।
ঈশ্বর দেখে মানুষ।
আমি দেখি তোমাকে শুধু
তুমি দেখো কি আমাকে?
তুমি যদি আমাকে দেখো
আমি তবে আকাশ ও জমিনে ইশ্বর
আর তুমি ঈশ্বরী।
৪. অরণ্যগ্রহণ
সেদিন মানুষ বলছিল আর ভালো লাগছে না
ঘরে বসে থাকতে। অনেক তো হলো। এবার একটু ঘর বার করা যাক। আমি ওকে বললাম প্রথমে জানালা খুলে দেখো পৃথিবী আগের মতো হলো কি-না।
সে জানালা খুলে আবার বন্ধ করে দিল।
ঘর বার করবার কথা আর একবারও বলল না।
মানুষকে বড় ভালোবাসি আমি। ওর ম্লান মুখ দেখে
বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি।
কিছুদিন পর ওকে বললাম এবার ছাদে গিয়ে দেখে আসতে পারো পৃথিবী তোমার জন্য নিরাপদ হলো কি-না।
সে প্রবল উৎসাহে সিঁড়ি ভেঙে চিলেকোঠা পেরিয়ে ছাদে গিয়ে পৌঁছল। দেখল আকাশ ভরা পাখি।
আমাদের বাড়ির চারপাশে গজিয়েছে অসংখ্য গাছ।
গাছের ফাঁকে ফাঁকে ছোট বড় ঝোপঝাড়। একদম অরণ্য।
মানুষ ফিরে এল ঘরে। বাইরে বেরোবার নাম নিল না আর। বহুকাল পরে মানুষের বড় ছেলেটা বাইরে বেরোতে চাইলে ওকে বললাম- জামাকাপড় ছেড়ে প্রাকৃতিক মানুষ হয়ে বাইরে বেরোতে পার। অরণ্য তোমাকে গ্রহণ করবে।
৫. অকাল সন্ধ্যা
এয়ারকন্ডিশনারটি বন্ধ রাখ।
জানালা খুলে দাও।
বারটা বেজে গেছে।
দেয়ালে ঝুলছে ক্যালেন্ডার
প্যালিওজয়িক কাল থেকে।
প্রতিদিন সূর্য উঠেছে।
একদিনও ব্যতিক্রম ঘটেনি।
গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে
চলে যাও পাহাড়ের ওপর।
নিচে ফেলে দাও দুহাতে ঠেলে।
উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে
ফুল গাছের টব সেট করো।
বিমানবন্দরটা ভেঙে গড়ো
সবুজ কলাবাগান।
বহুতলগুলো উপড়ে ফ্যালো
এক জোর টানে।
একটি পুঁইলতার মাথা
তুলে দাও চৌকাঠে।
রেফ্রিজারেটরটি ভেঙে ফেলো।
সন্ধ্যে হয়ে আসছে।
ফরিদ ছিফাতুল্লাহ
জন্ম ২১ মে ১৯৭৬, রংপুর জেলায়। বাবা মুহম্মদ ছিফাতুল্লাহ। মা সালেহা বেগম। জাতীয় বিমানসংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগে কর্মরত। পড়াশোনা- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ব বিষয়ে এক বছর লেখাপড়া। ১৯৮৬ সালে স্কুলছাত্র থাকাবস্থায় রংপুরের স্থানীয় দৈনিক দাবানলে কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। সেটাই প্রথম লেখা। এরপর দীর্ঘ বিরতি। তারপর ২০১৪ সাল থেকে পত্রিকায় কলাম লেখা দিয়ে লেখালিখিতে ফেরা। কক্সবাজারের স্থানীয় দৈনিক বাঁকখালীর সাহিত্যপাতা সম্পাদনা। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশে একসময় নিয়মিত কলাম লিখেছেন। এছাড়া জাতীয় ইংরেজি দৈনিক অবজারভার, ডেইলি সান, বাংলাদেশ টুডে ইত্যাদিতে সাম্প্রতিক বিষয়ে কলাম লিখেছেন। ২০১৮ সালে প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘রোদ বুনি ছায়াপথে’ প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের অমর একুশে বইমেলায় এটি বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের স্টলে বিক্রি তালিকায় শীর্ষস্থানে ছিল। ২০১৯ সালে কবিতাগ্রন্থ ‘বিষাদের সঞ্চয়ী হিসাব’ প্রকাশিত হয় পরিবার প্রকাশনী থেকে। বেশকিছু মননশীল প্রবন্ধ ও বই-আলোচনা ছাপা হয়েছে মুদ্রিত ও আন্তর্জালিক সাময়িক পত্রে। বেশকিছু স্মারকগ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২০
টিএ