ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৬)

শামীম খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২১
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৬)

শামীম খান। বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।

সম্প্রতি তিনি রাশিয়া ভ্রমণ করেছেন। পাঠকের জন্য তিনি তুলে ধরেছেন সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আর রাশিয়ার এগিয়ে চলার খণ্ড খণ্ড চিত্র। আমরা তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। আজ থাকছে এর ষষ্ঠ পর্ব।

রাজনৈতিক প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো। মস্কোর ঐতিহাসিক রেড স্কোয়ারে ঘোরাঘুরির পর মনে হলো এখানে নিশ্চয়ই লেনিনের ছোট মূর্তি পাওয়া যাবে। আমরা লেনিনের রেপলিকা (পথরের ছোট মূর্তি) কেনার জন্য কয়েকটি স্যুভেনির বিক্রয় কেন্দ্রে যাই। এর আগে অন্য জায়গাতেও আমি খুঁজেছি, পাইনি। ধারণা ছিলো রেড স্কয়ারে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। কিন্তু আমি যে ধরনের শোপিস খুঁজছিলাম সেটা পেলাম না। ম্যাক্সিমও চেষ্টা করছিলো কোথাও এটা পাওয়া যায় কি না। একটি কেন্দ্রের বিক্রেতা লোকটি কিছুটা বিস্মৃত হয়ে মাক্সিমের কাছে জানতে চায়, আমরা লেনিনের স্যুভেনিরই খুঁজছি কেন। তার কাছে তো আরও বিভিন্ন ধরণের শোপিস আছে। ম্যাক্সিম তাকে জানালেন, ছাত্রজীবনে সে (আমাকে দেখিয়ে) কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলো, এ কারণে- বলতেই মধ্য বয়সী ওই ব্যক্তি মাথা নেড়ে হেসে স্বাগত জানান। যদিও রুশ ভাষায় তাদের কথা বুঝতে পারিনি, পরে ম্যাক্সিম আমাকে জানালো। এর পর লেনিনের কাঠের তৈরি স্যুভেনিরের সঙ্গে স্ট্যালিন, বেজনেভ, গর্ভাচেভ ও রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের স্যুভেনিরও দেখান। এ সময় আমি গর্ভাচেভের স্যুভেনিটির বিষয়ে না সূচক মত দিলেই সে হো হো করে হেসে ওঠে। আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ও বুঝেছি। হাসতে হাসতেই সে বললো, এ তো ইতিহাসের অংশ- ‘ইট ইজ পার্ট অব হিস্ট্রি। ’ ১৯১৭ সালের অক্টোবরে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসার পর টানা ৭৩ বছর টিকে থাকে। ১৯৯১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটে তখন এর নেপথ্যে ছিলেন দেশটির তৎকালীন প্রধান এই মিখাইল গর্ভাচেভ।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আরও একটি বিষয় রাশিয়ার মানুষের ওপর প্রভাব ফেলেছে সেটা হলো, ধর্মের প্রতি এক শ্রেণির মানুষের বিশেষ করে মুসলিম তরুণদের আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে বলে জানা গেলো। তবে শহরে এর তেমন একটা প্রভাব নেই। গ্রামে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কাজ করছে। গ্রামের নতুন প্রজন্মের একটি অংশের মধ্যে একটু একটু ঝোঁক তৈরি হচ্ছে। সোভিয়েত আমলে সেখানকার মানুষ বিজ্ঞানভিত্তিক এবং বস্তুবাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলো। পরবর্তী প্রেক্ষাপটে যে পরিবর্তন ঘটে ধর্মের প্রতি ঝোঁক এটাও তার একটা প্রভাব। তবে এর পেছনে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক কোনো প্রভাব নেই। পারিবারিক প্রভাব থেকে তাদের মধ্যে এই প্রবণতা তৈরি হচ্ছে বলে জানা যায়।  

নভোভরোনেসে আমরা যে হোটেলে ছিলাম ওই হোটেলের লবিতে এক জনের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো বিভিন্ন বিষয়ে। প্রসঙ্গক্রমে জানতে চেয়েছিলাম ধর্ম বিষয়ে রাশিয়ার মানুষের ভাবনা কি। সে জানালো, বর্তমানে ধর্মের প্রতি কিছু মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে। এদের একটি অংশ তরুণ। এই তরুণদের সংখ্যা গ্রামে বেশি, শহরে তেমন লক্ষ্য করা যায় না। আর এই প্রবণতা অন্যান্য ধর্মের মানুষের চেয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটা অংশের মধ্যে দেখা যায়। সেখানে একটি গির্জায় গিয়েছিলাম, নভোভরোনেস শহর গড়ে ওঠার সময়ই এই গির্জাটি তৈরি হয়। গির্জার ভেরত ঘুরে দেখার পর বাইরে এসে রোসাটমের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ধর্ম বিষয়ে কথা হচ্ছিলো। তাকে কথা প্রসঙ্গে তার ধর্মীয় অনুভূতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছিলাম। তিনি স্পষ্টই জানালেন, ব্যক্তিগতভাবে ধর্মের প্রতি তার বিশেষ কোনো আগ্রহ নেই বা ব্যক্তিজীবনে সে অনুশীলনও করেন না।  

রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মকে কোনো ধরনের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয় না। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সেখানে রাজনৈতিক, অর্থনেতিক নীতির পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটলেও ধর্মীয় ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন না থাকলেও ধর্মীয় ক্ষেত্রে সোভিয়েত আমলে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় নীতি এখনও বিদ্যমান। আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের চার মূল নীতির ওপর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই চার মূলনীতির একটি ধর্মনিরপেক্ষেতা। পরে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে একটি ধর্মকে (ইসলাম) সংবিধানে সংযুক্ত করে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিলো, যা স্বাধীনতার মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার পর বহু বার সংবিধান সংশোধন হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হয় কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটেও এটি বহাল রাখা হয়েছে। দিনে দিনে রাজনীতি এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ধর্ম আরও শক্ত অবস্থান করে নিচ্ছে এবং এর জন্য বিভিন্ন দিকের বিভিন্ন উপাদান সক্রিয়। অথচ আমাদের সামনে খুব কাছের উদাহরণ রয়েছে বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত নেপাল সম্প্রতি সেখান (ধর্ম) থেকে বেরিয়ে এসেছে। ২০১৫ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে হিন্দু রাষ্ট্রের পরিবর্তে অর্থাৎ ধর্মকে বাদ দিয়ে নেপাল রাষ্ট্রটি ধর্মনিরপেক্ষতাকে গ্রহণ করেছে। চলবে...

সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (১)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (২)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৩)
 সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৪)
সোভিয়েত ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে রাশিয়া (৫)

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২১
নিউজ ডেস্ক 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।