ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর দেনা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন নভো এয়ারের এমডি

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর দেনা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন নভো এয়ারের এমডি নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অ্যাভিয়েশন অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

ঢাকা: বিরাজমান নানা সমস্যা উল্লেখ করে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে পাওনা ১২ হাজার কোটি টাকার বিষয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বেসরকারি বিমান পরিচালনা সংস্থা নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অ্যাভিয়েশন অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার (১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনে ৪২তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন।

লিখিত বক্তব্যে মফিজুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কমিটির অনুষ্ঠিত সভায় বেসরকারি এয়ারলাইন্সসমূহের সার্বিক দুরবস্থার চিত্র এওএবির পক্ষ থেকে বিশদভাবে তুলে ধরেছিলাম। দুর্ভাগ্যক্রমে সমস্যাগুলো নিরসনের জন্য এখনো কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বেসরকারি এয়ারলাইন্সের বিগত ৩০ বছরের অভিযাত্রায় বিপুল বিনিয়োগের পরও আটটি যাত্রী এবং ১২টির বেশি কার্গো এয়ারলাইন্স বিরাট দেনার ভার নিয়ে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বর্তমানে টিকে থাকা সংস্থাগুলোও ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাবে; সেই বিষয় অবধারিত। ভবিষ্যতে যেন কোনো এয়ারলাইন্স আর দেউলিয়া না হয় তার কারণ আমাদের নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এবং সেই অনুযায়ী যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা দূর করা অপরিহার্য।

এ সময় বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন মফিজুর। সেগুলো হলো-

• অসম প্রতিযোগিতা: বেসরকারি এয়ারলাইন্স জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক বিরাট অসম প্রতিযোগিতার মুখে অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত। সরকারি বিভিন্ন অবারিত সুযোগের সুবিধাভোগী বিমানের ভর্তুকিমূলক পরিচালন নীতির জন্য ব্যক্তি খাতের বিমান সংস্থা আদৌ টিকে থাকতে পারবে না। এই অসম প্রতিযোগিতার সমাধান আশু কাম্য।

• কম মূল্যের যাত্রী ভাড়া: বিমান দীর্ঘ দিন ধরে প্রকৃত খরচের তুলনায় কম মূল্যে যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ করছে। যার ফলে, বেসরকারি এয়ারলাইন্সও কম যাত্রী ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে। বিপুল সরকারী ভর্তুকির মাধ্যমে বিমান টিকে থাকলেও বেসরকারি এয়ারলাইন্স কোনোভাবেই টিকে থাকবে না। এই ক্ষেত্রে প্রকৃত ভাড়া নির্ধারণ অপরিহার্য্য।

• অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে সুপরিসর বিমানের ব্যবহার: চট্টগ্রাম এবং সিলেটের মতো স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃক সুপরিসর বিমান পরিচালনা একদিকে যেমন জাতীয় সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার হচ্ছে, অপরদিকে এর ফলে বেসরকারি এয়ারলাইন্স যাত্রী স্বল্পতায় অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত এই বিষয়ে সুরাহা হওয়া অপরিহার্য।

• অতিমূল্যায়িত জ্বালানির দাম: এয়ারলাইন্স পরিচালনা ব্যয়ের ৪০-৪৬ শতাংশ জ্বালানি খাতে ব্যয় হয়। সেই জ্বালানি তেল আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় ৩০-৪০ ভাগ বেশি দামে কিনে স্বল্প মূল্যে যাত্রী পরিবহন করতে বাধ্য হলে বেসরকারি খাত কোনোভাবেই টিকে থাকবে না। জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ব বাজারের সাথে সমন্বয় করা অপরিহার্য। উন্মুক্ত বাজার থেকে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে এয়ারলাইন্স যেন জ্বালানি তেল কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বর্তমানের জ্বালানি তেলের একচেটিয়া ব্যবসার কবল থেকে আমাদের মুক্ত করতে হবে।

• উচ্চ কর হার এবং কাস্টমস জটিলতা: উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিভিন্ন স্তরে অতি উচ্চ কর হার বিদ্যমান। সেই সাথে যন্ত্রাংশ আমদানিতে কাস্টমস হাউজে নানামুখী ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যন্ত্রাংশ ছাড়করণে দীর্ঘ সূত্রিতার ফলে এয়ারলাইন্স মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়। এই পরিস্থিতির উত্তরণ অপরিহার্য।

• সিভিল এভিয়েশন নিয়মকানুন এবং অতি উচ্চ চার্জ: সিভিল এভিয়েশনের বিরাজিত নিয়ম-কানুন এয়ারলাইন্স শিল্প বিকাশের অন্তরায়। অপরদিকে, বিভিন্ন সার্ভিসের জন্য অতি উচ্চ চার্জ এয়ারলাইন্সের জন্য সহনীয় নয়। তদুপরি বকেয়ার উপর আরোপিত ৭২ শতাংশ সারচার্জ পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। যৌক্তিকভাবে এই বিষয়ের সমাধান না হলে এয়ারলাইন্সগুলো এই বিপুল বকেয়ার ভারে ডুবে যেতে বাধ্য।

বৈঠকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তানভীর ইমাম, আনোয়ার হোসেন খান ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার অংশ নেন। তা ছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বেবিচকের  চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মুফিদুর রহমান, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রাহাত আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
এমকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।