ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

স্বপ্নের রাজ্যে কয়েক দিন

এসএম নাহিদ রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
স্বপ্নের রাজ্যে কয়েক দিন ছবি: নূর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ছোট বেলা থেকেই ভ্রমণের প্রতি আমার অসম্ভব রকমের ঝোঁক। সুযোগ পেলেই চলে যাই মনের খাবারের খোঁজে।

আর আমার মাথায় একবার যা ঢোকে সেটা না করা পর্যন্ত শান্তি নেই।

অনেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দার্জিলিং যান। কিন্তু সৌন্দর্যের দিক থেকে বান্দরবান দার্জিলিং থেকে কোনো অংশে কম নয়। বান্দরবানে শুধু শীতকালে বেড়াতে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ওখানে বর্ষাকালেই বরং মেঘ বেশি দেখা যায়। এছাড়া সারা বছরই পর্যটকরা ওখানে ভিড় করে।

দৃশ্য-১
দুই বন্ধু রাসেল ও রিয়াজকে নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ রাত ২টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য কুমিল্লা রেল স্টেশনে বসে আছি। ট্রেন আসার কথা ২টা ৫৭ মিনিটে, আসলো ভোর ৫ টায়। বাংলাদেশের ট্রেনে কেউ সঠিক সমযে ভ্রমণ করেছেন বলে আমার জানা নেই। ট্রেন নিয়ে অনেক অনেক মজার মজার ঘটনা প্রচলিত আছে। সেদিন আমার যে ঘটনাটি মনে পড়ল তা হলো- এক বিদেশি ভদ্রলোক আমাদের দেশের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। দেখা গেল ট্রেন ৫ মিনিট আগেই স্টেশনে চলে এসেছে। ভ্রদলোকতো মহা খুশি। তিনি বাংলাদেশ ট্রেনের প্রশংসা পঞ্চমুখ। এমন সময় তার বাঙালি গাইড বলল, স্যার এটাতো গতকালের ট্রেন!

যাই হোক কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া মাথাপিছু ৮০ টাকা। দুয়েকদিন আগে টিকিট না কাটলে সিট পাওয়া যায় না। তবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট যে কোনো সময় পাওয়া যায়। ভাড়া একই। চট্টগ্রাম পৌছুতে সময় লাগল সাড়ে তিন ঘণ্টা।

চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ২ মিনিট হাঁটলেই নিউমার্কেট মোড়। ওখান থেকে ছয় নম্বর বাসে করে বহদ্দার হাট বাস স্ট্যান্ড। আর যারা বাসে করে চট্টগ্রাম যাবেন তারা শহরে নেমে সিএনজি করে বহদ্দারহাট যাবেন। যা হোক বহদ্দারহাটে নাশতা সেরে উঠলাম বান্দরবানের গাড়ি পূরবীতে। এখান থেকে প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর বান্দরবানের গাড়ি ছাড়ে। একই স্টেশন থেকেই কক্সবাজারের গাড়িও ছাড়ে। বান্দরবানের ভাড়া ৭০ টাকা।

বান্দরবান শহরে পৌঁছুতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। শহরে থাকার মতো অনেক হোটেল আছে। ভাড়া হাতের নাগালে। আমরা মাঝাড়ি মানের একটি হোটেলে উঠলাম। তিন জনের প্রতি রাতে ভাড়া ৪০০ টাকা। খাওয়ার জন্য ও মোটামুটি মানের রেস্টুরেন্ট আছে। ৮০-১০০ টাকার মধ্যে পেট পুড়ে খাওয়া যায়।

যাই হোক হোটেলে ফ্রেশ হয়ে আমরা বিকেল ৩টার মধ্যে বের হলাম শহরের আশপাশের স্পটগুলো দেখতে। শহরের পাশে দেখার মতো ৩টি স্পট আছে। স্বর্ণ মন্দির, মেঘলা ও নীলাচল। এই তিনটা স্পটে যেতে আপনাকে একটি স্কুটার রিজার্ভ করতে হবে। ভাড়া ৫০০ টাকা।
ban-01ban-01
স্বর্ণ মন্দিরটি বৌদ্ধদের তীর্থস্থান। ওখানে ৫ শতাব্দী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে তৈরিকৃত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। মন্দিরটি ওখানকার বৌদ্ধরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে। এটি দেখারমত একটি প্রাচীন নিদর্শন। বৌদ্ধমন্দির থেকে চলে যেতে হবে মেঘলায়।

মেঘলায় আছে দুটি ঝুলন্ত সেতু, একটি ছোট চিড়িয়াখান। প্রবেশ ফি ১০ টাকা। তাছাড়া ওখানে পাহাড়েও হাঁটতে পারেন। পাহাড়ে ছোট দোকান আছে। দোকানে ডাব, কমলা, জাম্বুরা, পানি ইত্যাদি পাবেন।

মেঘলা থেকে সোজা চলে যাবেন নীলাচল। স্কুটারে করে উঁচু নিচু রাস্তা বেয়ে যেতে হয় ওখানে। রাস্তার বাঁকগুলো অনেক সময়ই আপনাকে রুদ্ধশ্বাস অনুভূতি দেবে। রাস্তায় যানবহন প্রতি চাঁদা দিতে হয় ২০ টাকা, আর নীলাচলে ঢোকার টিকিট মাথাপিছু ৫ টাকা।

নীলাচলের সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করার মতো ভাষা আমার জানা নেই। তারপরও চেষ্টা করছি। আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন তা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার ফুট উপরে। চারদিকে ছোটবড় পাহাড় থরে থরে সুসজ্জিত। যারা মাইক্রোসফটের মোটর রেস গেমটি খেলেছেন তার কিছুটা আঁচ করতে পাবেন। সেখান থেকে সূর্যাস্তটা মারাত্মক সুন্দর।

আপনি যদি প্রথমেই নীলাচল চলে আসেন ও পরে মেঘলা ও স্বর্ণমন্দির যান তবে কিন্তু সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন না। তাই আগে অন্য দু’টি স্পট শেষ করে এখানে আসবেন। আপনার ভাগ্য ভাল থাকলে এখানে পেয়ে যোতে পারেন মেঘের ছটাও।

একটু কল্পনা করুনতো আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন তার অনেক নিচে মেঘের সারি। ঠিক সেই ঘটনাটিই ওখানে ঘটতে পারে। শহরের ভেতর একটি রাজবাড়ি আছে। তবে নামেই রাজবাড়ি। একটি গেইট ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে আধুনিক বাড়ি ঘর।

বান্দরবানের মানুষগুলো যে অনেক নরম প্রকৃতির তার প্রমাণ মিলল একটি কনসার্টে গিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ একটি কনসার্টের আয়োজন করেছিল। কিন্তু শ্রোতাদের মাঝে কোনো ধরনের উত্তেজনা দেখা যায়নি। বরং আমরা নেচে ফাটিয়ে ফেলেছি আর তারা অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। শিল্পীর ভাল গানে মানুষগুলোর কোনো মাতামাতি নেই আবার খারাপ গানেও নেই কোনো প্রতিবাদ।
oG
দৃশ্য-২
এর পরদিন আমরা গেলাম শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ও নীলগিরি। আগেই বলে নিচ্ছি বান্দরবান ভ্রমণের সময় ৮-১০ জনের একটি টিম নিয়ে যেতে পারলে ভাল হয়। এতে মজা যেমন বেশি হয় তেমনি খরচও পরে কম। আমরা কুমিল্লা থেকে যদিও ৩ জন গিয়েছিলাম, সেখানে গিয়ে নোয়াখালীর আরও ৪ জন ও চট্টগ্রামের ৩ জনের সাথে পরিচয় হয়। সবাই সমবয়সী ও বন্ধুভাবাপন্ন হওয়ায় আমাদের ভ্রমণের আনন্দ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

সকালে নাস্তা সেরে আমরা জলপ্রাপাত, চিম্বুক ও নীলগিরির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। বান্দরবান শহর থেকে এদের দূরত্ব যথাক্রমে ৮,২৬ ও ৪৪ কি.মি.। শহর থেকে জিপ ভাড়া নিলে সবচেয়ে ভাল হয়।

জিপের ভাড়া ২৩০০ থেকে ২৬০০ টাকা। নীলগিরিতে পার্কিং চার্জ ২০০ টাকা। আর বাসে যেতে চাইলে শহর থেকে রিকশায় ৩ নম্বর স্যান্ডে যেতে হবে। ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা। সেখান থেকে ৯টায় প্রথম বাস ছাড়ে। নীলগিরির ভাড়া মাথাপিছু ১৩০ টাকা। নীলগিরিতে থাকার মতো কটেজ রয়েছে। কটেজ বুকিং দিতে হয় শহরের সেনাবাহিনী দপ্তর থেকে। ভাড়া একটু বেশি। সেখানে সাধারণত ভোরে মেঘের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আপনি দাঁড়িয়ে থাববেন। আপনার চারদিকে থাকবে শুধু মেঘ আর মেঘ। মনে হবে আপনি মেঘের সমুদ্রে ভাসছেন।

চিম্বুক পাহাড়ে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই। তবে মেঘ যদি পাওয় যায় তবে এর চেয়ে সুন্দর আর কিছুই হতে পারে না।

তবে শৈলপ্রপাতের বিশাল ঝর্না আপনাকে বিমোহিত করবেই। অনবরত বারিধারা প্রতিনিয়ত ঝরেই যাচ্ছে।

সেখানকার অধিবাসীরা এই পানিতে গোসল করে ও এখান থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে। আপনি চাইলে সেখানে অবগাহন করে নিজের দেহমন দুটোই প্রফুল্ল করতে পারেন। সেখানে বেশ ককেয়টি দোকানও আছে। দোকানগুলোতে স্থানীয়ভাবে তৈরি থামী, গামছা, চাদর ও বিভিন্ন রকম শোপিস পাওয়া যাবে।

দৃশ্য নং-৩:
ভ্রমনের তৃতীয় দিন আমাদের গন্তব্যস্থল বগালেক। সকালে রওয়ানা দিলাম বগালেকের উদ্দেশ্যে। পুরো বান্দরবান ভ্রমণের মধ্যে বাগ‍ালেক ভ্রমণ হয়ে থাকবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মরণীয় ঘটনা। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৭০০ ফুট উপরে বগালেকের অবস্থান। পৃথিবীতে আর কোথাও এত উঁচুতে প্রাকৃতিক লেক আছে বলে আমার জানা নেই। বগালেকের আশপাশে ছোট-বড় কূপ থাকলেও কোনটিতে পানি নেই। তাই একে ঘিরে রয়েছে অনেক কৌতূহল।
Ban-032
বগালেক নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অনেক কল্পকাহিনীও প্রচলিত রয়েছে। বহু আগে এখানে ৩০ পরিবার বম জাতি বাস করতো। তারা সাধারণত সাপ, ব্যঙ ইত্যাদি খেতো। একবার এক বিশাল সাপ ঢুকে সব গরু-ছাগল খাওয়া শুরু করল। তাই বমরা সবাই সেই সাপটি ধরে টানতে থাকে। তবে এর বিশালতা ছিল এতই যে যতই টানে ততই আসতে থাকে। মাথা আর পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে তারা সাপটিকে দুই টুকরা করে ফেলে। লেজের অংশটি সবাই মিলে রান্না করে খেয়ে ফেলে। কিন্তু এক বুড়ি সন্দেহ হওয়ায় সাপটির মাংস খায়নি। সে রাতে সপ্নে এই রকম একটি নির্দেশনা পেল যে, তুই এই এলাকা ছেড়ে চলে যা না হলে তুই ধ্বংস হয়ে যাবি। বুড়ি এলাকা ছেড়ে চলে যায়। আর বমদের ৩০টি পরিবার নিয়ে পাহাড় দেবে যায়। আর সেখানে সৃষ্টি হয় একটি লেক। যা আজ বগালেক নামে পরিচিত।

ঘটনাটি নাকি বেঁচে যাওয়া সেই বুড়ি বর্ণনা করেছেন। এখনো নাকি অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার রাতে লেক থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। লেকটি সঠিক গভীরতা আজ অবধি নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ভূতত্ত্ববিদদের মতে এটি একটি মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। তবে এখানে এটি অবাক ঘটনা ঘটে, সেটি হলো, লেকের পানি অ্যাকুরিয়ামের মতো স্বচ্ছ হলেও প্রতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে ঘোলাটে হয়ে যায়। যা নিয়েও বিভিন্ন কল্পকাহিনী রয়েছে।

যাই হোক আমরা ১০ জন রওয়ানা দিলাম সকাল বেলা। শহর থেকে প্রথম যেতে হবে রুমা বাসস্ট্যান্ড। মাথাপিছু ১০-১৫ টাকা রিকশা ভাড়া। ৮টা ৩০ মিনিটে প্রথম বাস। প্রথম বাসের পর আবার দুপুরে আরেকটি বাস। তাই সকালের বাসটিই ধরতে হবে। বাসের ভাড়া মাথাপিছু ৭০ টাকা। যে রাস্তায় চিম্বুক ও নীলগিরি গিয়েছিলাম সেই রাস্তা ধরে কিছুদূর যাওয়ার পর কেরাণীর হাটে গিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে নীলগিরি আরেকটি রাস্তা গেছে রুমা উপজেলার দিকে।

বাস থেকে নেমে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে রুমা উপজেলায় যেতে হয়। প্রথম বাসটি গিয়ে পৌঁছুতেই ট্রলার ছাড়ে। ট্রলার ভাড়া মাথাপিছু ৩০ টাকা। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে আ‍ঁকাবাঁকা সাঙ্গু নদী।

সে নদী ধরে ট্রলার দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাই অন্যরকম। ট্রলার গিয়ে থামল রুমা বাজারে। রুমা বাজারটি দেখে তো আমরা অবাক। এতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে জমজমাট বাজার। দেখতে ঠিক গ্রামের বড় বাজারগুলোর মতো।

বাজারে গ্রামীণ ও টেলিটক মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে। রয়েছে বিদ্যুৎও। থাকার জন্য মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। ভাড়া মাথাপিছু ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। মোটামুটি মানের খাবার হোটেলও রয়েছে।
ban-420ban-420
রুমা থেকে বগালেকের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। বগালেকে যেহেতু থাকার ব্যবস্থা রয়েছে তাই আমরা এখানে রইলাম না। দুপুরের খাবার শেষ করে বগালেকের উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। তবে এখান থেকে গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক।

স্থানীয় প্রশাসন গাইড ছাড়া আপনাকে কিছুতেই সেখানে যেতে দেবে না। নিজেদের নাম-পরিচয়, অভিভাকদের ফোন নং প্রশাসনের কাছে জমা দিয়ে তবেই ভেতরে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলবে। যাতে রাস্তায় কোনো রকম বিপদাপদ ঘটলে অভিভাবকদের কাছে খবর দেওয়া যায়।

স্থানীয় প্রশাসনের ছাড়পত্র নিয়ে গাইড কাজল ভাইকে সঙ্গী করে আমরা চললাম বগালেকের উদ্দেশে। প্রতিদিনের জন্য গাইডকে দিতে হবে ৪০০ টাকা । আর তার থাকা খাওয়া, যাতায়াত বাবদ আরো ৪০০ টাকা খরচ। রুমা থেকে জিপে করে প্রথমে ১১ কি.মি. দূরে শৈরাতং পাড়ায়,  বাকি ৬ কি.মি. পায়ে হেঁটে। রিজার্ভ জিপ ভাড়া ১৫০০ টাকা। লোকালে গেলে প্রতিজন ৭০ টাকা। তবে ২০ জন না হলে গাড়ি ছাড়ে না।

এখানকার রাস্তায় ইট বিছানো। তবে কোথাও রাস্তা প্রচণ্ড খাড়া আবার কোথাও ঢালু। পাহাড়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলছে তুমুল গতিতে। চোখ খুললে পিলে চমকে ওঠে। মোটামুটি রোলার কোস্টার চড়ার আরেকটি অভিজ্ঞতা হলো ওখানে। যদিও পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ওঠার কারণে এর  গতিবেগ ততটা বোঝা যায় না।

হঠাৎ মেঘের গুড়গুড় শব্দ। যেহেতু জিপে কোনো ছাদ থাকে না, সেহেতু বৃষ্টি আসলে ভেজা ছাড়া অন্য উপায় নেই। তাই আমার পরামর্শ হলো ওখানে যাওয়ার সময় একটি ছাতা, টর্চলাইট, হাটার জন্য নরম স্যান্ডেল বা কেডস ও পর্যপ্ত খাওয়ার পানি নেওয়া উচিৎ। আর ব্যাগ যত হালকা হবে ততই আরাম পাবেন। শুরু হলো বৃষ্টি। স্থানীয় একজনের কাছে অনেকগুলো পলিথিন ছিল। তিনি আমাদের সবাইকে একটি করে পলিথিন দিলেন। এমন সময় গাড়ি নষ্ট। ড্রাইভার জানালেন বাকি রাস্তা পায়ে হেঁটে যেতে হবে! শৈরাতং পাড়া আসতে এখনো ১ কি.মি. বাকি।

শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। চারদিক অন্ধকার করা বৃষ্টি। আশপাশে কোনো বাড়িঘরও নেই যে আশ্রয় নেব। শুধু পাহাড় আর পাহাড়। ফিরে যাবারও কোনো উপায় নেই। শুরু হলো বজ্রপাত। মেঘগুলো যেনো মাথার অনেক কাছে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। তাই আলো এবং শব্দ দুটোই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। মেঘের  গুড়ুম গুড়ুম শব্দে ভয় পেয়ে যদিও প্রাণে পানি নেই তবুও সেসময় কেমন যেনো একটা অদ্ভূত অনুভূতি হলো সেটা ভাষায় প্রকাশ করার না।

ভয় পেলে তো প্রিয়জনের কথাই মনে পড়ে। এ অবস্থঅয কাছের মানুষগুলোর কথা মনে পড়লো আর ভাবছি তারা হয়তো জানবেওনা আমরা কোথায় মরে পড়ে আছি। মোবাইল বের করে দেখি গ্রামীণ ফোনের নেটওয়ার্ক আছে। সবচেয়ে কাছের দু’একজনকে ফোন দিয়ে শেষ বিদায় নিয়ে নিলাম।
Ban-05
বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটতে থাকলাম। এদিকে পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। শৈরাতং পাড়ায় কয়েকটি দোকান পেলাম। ভেতরে বসার মতো জায়গা আছে। দোকানগুলোতে রুটি, কলা, বিস্কুট, পানি ইত্যাদি পাওয়া যায়। প্রাণ ফিরে পেলাম। এখানকার লোকগুলো বাংলা বোঝে না।   গাইড দোভাষীর ভূমিকা পালন করল। এখানে পরিচয় হল জনের সঙ্গে। তার বাড়ি বগালেক। সেও বগালেক যাবে। জন বাংলা বোঝে শুনে আমরাও খুশি হলাম। ঢাকাতে রিকশা চালায় জন।

কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। আমরা ৬ জন হাঁটতে থাকলাম।

গাছপালা ও পাহাড়ের কারণে অনেকটা আলো-আধাঁরি পরিবেশ। এবার আমরা ৬ জন দাঁড়িয়ে, বাকি ৫ জনের জন্য অপেক্ষা করছি আর তাদের টারজানের মতো শব্দ করে ডাকছি। কিছুক্ষণপর বিপরীত দিক থেকে টারজানের শব্দ এলো। বুঝলাম তারাও আমাদের মত দুষ্টুমি করে সাড়া দিচ্ছে। দাঁড়িয়ে রইলাম। একটুপর যা দেখলাম তা আর বর্ণনা করার মতো নয়। ৩ জন পাহাড়ি আমাদের সামনে এসে হাজির। বুঝলাম টারজানের শব্দ তারাই করেছে।

আমাদের দেখে তারা তাদের কোমড়ের পিছনে থাকা ধারালো দা বের করল। কলিজাতে কারোই আর পানি রইল না। যে দা, গলা কাটার জন্য দুই কোপ লাগবে না। পুরো বান্দরবানের পাহাড়িদের হাতে একই ধরনের বিশেষ দা দেখা যায়। পাহাড়িরা আমাদের কিছুই করলো না।

আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের বাড়ি কি এখানে। তারাও তাদের ভাষা ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিল এখানেই তাদের বাড়ি। জন ও গাইডসহ মোট ১২ জন হাটতে থাকলাম পাহাড়ের কোল ঘেষে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। পাহাড়ের সাথে লেগে আছে মেঘ। দৃশ্যটি ছিল অসাধার‍ণ। উঁচুনিচু পথ ভাঙতে অনেক কষ্ট। হাতের ব্যাগটির ওজন ছিল ৫ কেজি। ৫ কি.মি. হাঁটার পর মনে হলো ওজন ২০ কেজি। সবাই হাপিয়ে উঠেছে। এদিকে সূর্যের আলোও নিভু নিভু। চারিদিকে প্রায় অন্ধকার। আরও প্রায় ১ ঘণ্টার পথ বাকি। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে হাঁটতে থাকলাম। ভয় আবার দানা বেধে উঠছে।

জন আর গাইডকে একটু পরপর প্রশ্ন করতে থাকলাম আর কতদূর আর কতদূর। সেই ১ ঘণ্টা আগে থেকেই তাদের একই উত্তর আর আধা ঘণ্টা, আর আধা ঘণ্টা। চারদিক পুরোপুরি অন্ধকার। জন একটি পাহাড়ের চূড়া দেখিলে বলল ওখানেই বগালেক। আমরা ওখানেই যাব। স্বস্তি পেলাম। কিন্তু পাহাড় দেখতে ছোট মনে হলেও উঠতে গেলে বোঝা যায় কত ধানে কত চাল! খাড়া পাহাড়ে উঠতে থাকলাম। ২০ মিনিট সোজা উপরের দিক হাঁটার পর আর পারছি না। ঘামে গা পুরোপুরি ভিজে গেছে। শীতল মেঘ গায়ে এসে দোলা দিচ্ছে কিন্তু তবুও রেহাই মিলছে না উত্তাপ থেকে।

মোবাইলের টর্চ ছিল বলে রক্ষা। না হলে পরিস্থিতি কি ভয়াবহ হতো কল্পনাও করা যায় না। ইতোমধ্যে কয়েক জনের পায়ে জোক কামড়ে ধরে আছে। তারা জোক টেনে টেনে ছিড়ে ফেলছে। আমার সামনে দিয়ে একটি সাপ হেঁটে যাচ্ছিল, না দেখে পারা দিচ্ছিলাম, ঠিক এমন সময় আমার পেছনে থাকা রিয়াজ গেঞ্জি ধরে টান দিয়ে আমাকে থামিয়ে দেয়।

চোখের সামনে সাপ দেখে এবং সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েও কেন যেন ঠিক তেমন কোনো অনুভূতি হচ্ছিল না। জীবনের মায়া তো ছেড়ে দিয়েছি সেই কখন!
ban-062
হাঁটতে হাঁটতে ক্ল‍ান্ত। আর পারছি না, বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবার হাঁটা। প্রতিটি পদক্ষেপ মনে হচ্ছিল এক একটি হাই জাম্প। জন আর গাইডকে আবার সেই একই প্রশ্ন, আর কতদূর আর কতদূর। তাদের সেই একই জবাব, আর আধা ঘণ্টা, আর আধা ঘণ্টা!

অবশেষে চূড়ায় এসে পৌঁছলাম। উঠেই সবাই চিৎপটাং হয়ে মাটিতে শুয়ে-বসে পড়ল। জন আমাদের দেখাল, এই হচ্ছে বগালেক। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। মোবাইলের ঝাপসা আলোর সঙ্গে নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বগালেকের একটি অবয়ব তৈরি করলাম।

ভয়ও কম পাচ্ছি না। এতো কাহিনী এই লেকের। সামনে থেকে টর্চের আলো। সেনাবাহিনী ডাকছে। এখানে তাদের ক্যাম্প রয়েছে। ক্যাম্পে গেলাম। আর্মিদের একজন জানালেন আরও আগে এখানে আসা উচিত ছিল। রাত করা ঠিক হয়নি। তারা কিছু পরামর্শ দিয়ে দিলেন। আমরা যেন দল ছাড়া এককভাবে কোথাও না যাই ইত্যাদি ইত্যাদি।

একটু দূরেই বিদ্যুতের আলো। সৌর বিদ্যুৎ। এখানে বমরা বাস করে। আমাদের তাদের বাড়িতেই থাকতে হবে। গিয়ে দেখলাম সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে একটি ঘরে ১৫-২০ জন সিডিতে সিন্দাবাদ দেখছে। অনুভূতিটাই অন্যরকম। এমনিতেই ভূতুরে পরিবেশ। তার উপরে সিন্দাবাদ। একজন নারী এসে আমাদের দোতলায় নিয়ে গেলেন। কাঠের তৈরি দোতলা ঘর। আমরা তাকে দিদি বলে সম্মোধন করলাম।

দিদি আমাদের লেক থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললেন। তখন রাত ৮টা। চারদিকে অনেক ঠাণ্ডা পড়েছে। সাধারণ ঠাণ্ডার সময় পুকুরের পানি আরো ঠাণ্ডা ও টিউবওয়েলের পানি গরম থাকে। কিন্তু ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত। লেকের পানি অনেক গরম। এতো ঘটনা শোনার পর অন্ধকারে গোসল করতে ভয় লাগছিল। তাছাড়া সাবারই মনে হচ্ছিল পানি যেন সবাইকে লেকের মাঝের দিকে টানে।

রাতে দিদি আমাদের তার গাছের পাঁকা পেঁপে খাওয়ালেন। কাঠের তৈরি দোতলা এই কটেজটির মালিক দিদিরাই। নিচ তলায় দিদিরা থাকেন আর গেস্ট আসলে দোতলায় থাকতে দেন। দিদি ও তার পরিবারের লোকদের ব্যবহার ও আপ্যায়নে একবারও মনে হয়নি আমরা কোনো কটেজে আছি। মনে হচ্ছিল আমরা দিদির বাড়িতে বেড়াতে এসেছি।

এবার দিদি সম্পর্কে কিছু বলি। দিদির নাম সিয়াম। আগে অন্য পাহাড়ে থাকতেন। এখন এখানে এসে বাড়ি করেছেন। তিনি কাপ্তাই থেকে ডিগ্রি কমপ্লিট করেছেন। এখন স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তার স্বামী ব্যাংকে চাকরি করেন।

রাতে খেতে বসলাম। জুম চালের ভাত, গাছের মিষ্টি কুমড়ার তরকারি, ডিম ভাজি ও ডাল দিয়ে পেট পুড়ে খেলাম। তারা আমাদের মতোই মশলা ব্যবহার করেন। তাই খেতে কোনো সমস্যাই হলো না। প্রতি বেলা খাবার বিল মাত্র ৫০ টাকা। আর কটেজের ভাড়া প্রতি রাত মাথাপিছু ১০০ টাকা। খাওয়ার ফাঁকে দিদির সঙ্গে আলাপ করছিলাম। তার বিনয়সুলভ কথা আমাদের বিমোহিত করল। তার কথাগুলো ছিল অনেকটা এরকম, পাহাড়িদের দেখতে এসেছেন? আমরাতো জংলি। জংলিদের কেউ দেখতে আসে? আমরা গরীব মানুষ ভাই। কি আর খাওয়াবো। যা আছে তাই দিলাম। খেতে লজ্জা পাবেন না কিন্তু। আমি আগে মানুষের বাড়িতে গিয়ে খেতে লজ্জা পেতাম, এখন আর পাই না। তার এ ধরনের কথা শুনে মনে হচ্ছিল আমরা যেন এই পরিবারের ঘনিষ্ট আত্মীয়।
ban-07
তাদের সঙ্গে এমনভাবে মিশে গিয়েছিলাম যে এখনো তাদের অনেক মিস করি। রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। তবে বাচ্চার কান্নার আওয়াজের কথা মনে হয়ে ভয় ভয় লাগছিল। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই প্রথম পুরোপুরি লেকটির সৌন্দর্য দেখে আমরাতো বিমোহিত। গত দিনের সব কষ্ট যেনো ভুলে গেলাম এক নিমেষে।

মেঘের কারণে মনে হয় সমুদ্রের মাঝখানে একটি মিঠাপানির লেক। লেকের পাড় ধরে হাঁটছি আর এর সৌন্দর্য উপভোগ করছি। মাঝে মাঝে পাহাড়িদের সঙ্গে দেখা হয়। তারা একেক জন একেক কাজে ব্যস্ত। একটু পর দেখা গেল ২ জন মেয়েসহ ৬-৭ জনের একটি দল কাজের ফাঁকে অবসর নিচ্ছে। তাদের সঙ্গে অনেক মজা করলাম। তারাও অনেক মিশুক প্রকৃতির।

দৃশ্য- ৪:
এবার ফেরার পালা। ফিরে আসতে মন চাইছে না। এদিকে আমাদের ৪ জন সিদ্ধান্ত নিল তারা কেওক্রাডং যাবে। এখান থেকে কেওক্রাডং প্রায় ৬ কি.মি.। কিন্তু আমাদের সাহসে কুলালো না। ৪ জনকে রেখে আমরা ৬ জন চলে এলাম। দিদির ফোন নম্বর নিলাম। মজার ব্যাপার হলো আমাদের সবার মধ্যে দিদি শুধু আমার নামটিই মনে রাখতে পেরেছিলেন। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা হাঁটতে থাকলাম। দেহ চলে আসছে বাড়ির দিকে, কিন্তু মন পড়ে রয়েছে বগালেকে।

সকাল ৯টায় রওয়ানা দিলাম। চট্টগ্রাম পৌঁছুতে রাত ৯টা।   ১১টায় ট্রেন ছাড়বে। এদিকে ট্রেনে ঘটে গেল কয়েকটি মজার ঘটনা যা বর্ণনা না করলেই নয়। বন্ধ ট্রেনে তিনজন বসে আছি। হঠাৎ চোখ গেল ট্রেনের চেইনের দিকে। যেটা টানলে ট্রেন থামে। আমি এর আগে পুরনো ট্রেনগুলোতে বন্ধ থাকা অবস্থায় চেইন টেনে দেখেছি। কিছুই হয় না। এটা ছিল নতুন ট্রেন। ভাবলাম ট্রেন যেহেতু এখন বন্ধ আছে টান দিলে আর কি হবে। এখানে চেইন টানলে বড়জোর ড্রাইভারের কাছে কোনো সংকেত যাবে। দুই বন্ধুকে দেখানোর জন্য দিলাম টান। শুরু হয়ে গেল বগির ভেতরে প্রচণ্ড শব্দ। অনেকটা চাকা পাংচারের মতো। তবে মাত্রা ছিল অনেক তীব্র। পুরো বগিতে আতংক ছড়িয়ে পড়লো। কেউ কেউতো ভয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেছে। আমার বন্ধুরাও বোকার মতো তাকিয়ে আছে। আমি ভদ্রলোকের মতো ট্রেন থেকে চম্পট দিলাম। ২-৩ মিনিট পর বাইরে দিয়ে এসে দেখি শব্দ থামেনি। ভয় পেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর দূর থেকে ভেতরে থাকা বন্ধুকে ফোন দিলাম। সে জানালো শব্দ থেমেছে তবে কয়েকজন মুরব্বী আমার এই অকর্মের জন্য তাদের বকাঝকা করেছে।

ট্রেন ছাড়লো। আমি বগিতে এসে বসলাম। কিন্তু সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যে নিজেকে তখন চিড়িয়া মনে হচ্ছিল। ট্রেন চলছে ঝিক্-ঝিক্, ঝিক্-ঝিক্। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। রাসেল একটি চিপস কিনে আনলো। চিপসের প্যাকেট এতই শক্ত ছিল যে এটি ছিড়তে তারা দুজন ব্যর্থ হলো। আমি তাদের হাত থেকে প্যাকেটটি এমনভাবে নিলাম যে এটি ছেড়া কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু এটি এতই শক্ত ছিল যে দাঁত দিয়েও ছিড়তে পারলাম না। পরে ট্রেনের মেঝেতে রেখে পা দিয়ে দিলাম এক ঘা। কিছুই হলো না। আরেকটু জোরে আবার দিলাম। কিছু হলো না। এবার সর্ব শক্তি দিয়ে তৃতীয় ঘা দিতেই বিকট শব্দে প্যাকেট ছিড়ে গেল। মনে হলো গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়েছে। যাত্রীরা সবাই হচকিত ভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠল। সবার চোখে আতংকের ছাপ। আবার আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদিকে চিপসের প্যকেটে চিপস আর নেই। সব গুড়ো হয়ে গেছে। আমি ভয়ে দ্রুত আরেক বগিতে এসে ফ্লোরে বসে রইলাম।

এদিকে এক বৃদ্ধ বগিতে শুধু হাঁটাহাঁটি করছে আর আমাকে জিজ্ঞাসা করে টিকেট আছে কিনা। বারবার একই জবাব দিতে দিতে আমি বিরক্ত। মেঝেতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ আমার মাথায় কি যেন পড়ল। দেখি বৃদ্ধ লোকটি আমার মাথার উপর দিয়ে শপিং ব্যাগে করে শুটকি নিয়ে যাচ্ছিল। ব্যাগের তলা ছিড়ে সব আমার মাথায় পড়েছে।

ট্রেনের টয়লেটে গেলাম। বের হওয়ার সময় ছিপি আর খুলতে পারছি না। অনেক জোরাজোরি করছি। রাসেলকে ফোন দিলাম। সে ট্রেনের শব্দের কারণে কিছুই বুঝতে পারছে না। ফোন রেখে আমি দরজায় আঘাত করছি। মনে নানা রকম ভয় উকি দিচ্ছে। যদি ট্রেন এক্সিডেন্ট করে, সবাই বাইরে বের হয়ে যাবে। আমিই শুধু আটকে যাব। অথবা যদি কুমিল্লা স্টেশন পার হওয়ার আগে আমি বের হতে না পারি তবে বাথরুমে করে আমাকে ঢাকা চলে যেতে হবে। আমার অবস্থা ছুটির ঘণ্টার ফটিকের মতোও হতে পারে। অবশেষে জোর প্রচেষ্টায় বের হয়ে এলাম এবং অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরলাম। যত দিন বেঁচে থাকব এই ভ্রমণটি আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।


আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়

লেখক: নাহিদুর রহমান
[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।