সিলেট: শাঁ শাঁ শব্দে শুভ্র জলের অদ্ভুত যে অপ্সরির দেখা মিলেছিলো বৃষ্টি মৌসুমে, শীতে সেই অপ্সরি এখন পাথুরে রূপ নিয়েছে। কালো পাথরের নিস্তেজ রূপে শুষ্কতার আবরণে ঢাকা।
শান্ত পানতুমাই ঝর্না, নেই চুমকির লহরী । মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিরে বাংলাদেশের গোয়াইঘাটের পানতুমাই এখন পাথরময়। জলে ডুব দিয়ে আধো আধো ভেসে থাকাতেই তার বর্তমান রূপ। আর পাথুরে চাদর গায়ে দিয়ে পাহাড়ি ঢলের অপেক্ষা।
পাশেই জেগেছে তীর। তবে এখনও জেগে আছে পাহাড়ি সবুজ এক শ্যামলীমা। পানতুমাই পাথর জলের ধারায় সিক্ত হবে ফেব্রুয়ারি মাসের পর পরই। তবে ফেব্রুয়ারির শেষদিক থেকেই অপরূপ মায়াজালে সেজে যায় পানতুমাই।
পানতুমাই গ্রামের কিশোর আশরাফ, লিয়াকত আর হোসেন যেমনটি বলেছেন, শীতকালে শুষ্ক থাকে পানতুমাই ঝর্না। তবে বৃষ্টি আসার সঙ্গে সঙ্গে ভরে যায় ঝর্না, পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায় পাথর। ফুলে-ফেঁপে ওঠে পাহাড়ের বুক-চেরা পানতুমাই নদী। তখন ছোট নৌকায় চড়ে এই সুন্দরীর কোলে চড়ে বেশ খানিকটা সময় উপভোগ করা যায়।
স্থানীয়রা পানতুমাই ঝর্নাকে ‘বরহিল ঝর্না’ বলেই ডাকেন। তারা জানান, গত বছর বরহিল ঝর্নার কথা প্রচার হওয়ার পর প্রতিদিন হাজারো লোকের সমাগম হয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে ঝর্নাধারা নিস্তেজ হয়ে পড়ায় পর্যটক আগমন কমে গেছে।
সম্প্রতি পানতুমাই ঝর্না এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পানতুমাই এখন পুরোপুরি শান্ত। কালো পাথর ঘিরে সে যেন অপেক্ষায় আছে বর্ষার বারিধারার। এক পশলা জলের স্নানেই জেগে উঠবে পানতুমাই। সেই সঙ্গে হাজার মানুষের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠবে মায়াঝর্না পানতুমাই।
আর পাথরের স্নেহের বারি ছড়িয়ে ‘পিয়াইন’ নদী ধরে ছুটে চলবে বাংলাদেশে বয়ে চলা নদী ও খাল বিলে। ঝর্না চুমকির লহরী হয়ে দুলছে। ঝর্নার স্বচ্ছ নীলাভ জলের স্পর্শে সবুজ-শ্যামলিমায় ভরে উঠছে পানতুমাই গ্রাম মাঠ-প্রান্তর।
শীতের শুষ্কতার চাদরে ঢাকা পানতুমাই দেখতে এসেছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ফাবিহা নওশিন। সারা বছর ঘোরাঘুরির একটা নেশা থেকেই ছুটে আসা।
ঝর্নার জল না পেলেও তিনি মুগ্ধ হয়েছেন পানতুমাইয়ের পাথরের সৌন্দর্য দেখে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সুউচ্চ পাহাড় ঘেরা পানতুমাই গ্রামটিও হতে পারে পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম স্থান। সবুজে ঘেরা পাহাড়ের পাদদেশের এই গ্রামের সবুজ শ্যামলীমা শুষ্ক মৌসুমেও অটুট আছে।
চলুন যাই পানতুমাই: সিলেট থেকে তামাবিল মহাড়ক ধরে গাড়ি নিয়ে ৪০ মিনিটে প্রথমে যাবেন সারীঘাট বাজার। সেখান থেকে বাঁ দিক ধরে সারীঘাট-গোয়াইনঘাট লিঙ্ক রোডে আরো ৩০ মিনিটের পথ। এর পরেই পাবেন গোয়াইনঘাট সদরের প্রবেশমুখ। ডান দিকে গেলে উপজেলা সদর, আর বাম দিকের রাস্তা চলে গেছে সোনারহাট-প্রতাপপুর সীমান্ত ফাঁড়ির দিকে। পানতুমাই যেতে হলে এই পথে ছুটতে হবে আরও ৩০ মিনিট। কিছুদূর গেলেই ঘিরে ধরবে পাহাড়। সহজেই বোঝা যায় গ্রাম পাংথুমাই আর বেশি দূর নয়। তারপর 'আইরকান্দি' ব্রিজ পাড়ি দিয়ে পাওয়া যাবে মাতুর তল বাজার। এই বাজার শেষে পাংথুমাই গ্রামের প্রবেশপথ। এই পথ ধরে আরও ৫ মিনিট পরে গাড়ি পৌঁছে যাবে মায়াময় সুনিবিড়ে। যেখানে পানতুমাই ঝর্না অপেক্ষা করছে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভাসতে।
ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর মাস শেষে ‘ট্রাভেলার্স নোটবুক’র সেরা লেখকের জন্য তো থাকছেই বিশেষ আকর্ষণ..
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৪