ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

কাতার এয়ারের ময়লা সিটের মূল্য কত!

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪
কাতার এয়ারের ময়লা সিটের মূল্য কত!

ঢাকা: ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজে ভোগান্তি সঙ্গী করেই রওয়ানা হয়েছিলাম স্পেনের বার্সেলোনার উদ্দেশ্যে। সারাপথ ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি।

ঢাকা থেকে দোহার পর এই ভোগান্তি তুলনামূলক কম ছিল।

১ মার্চ ফেরার পথে ধরেই নিয়েছিলাম দোহা থেকে ঢাকার পথে একই দুর্ভোগে পড়তে হবে। কিন্তু না কাতার এয়ারওয়েজ ভড়কে দিতে ওস্তাদ। যেখানে যা ভাবি তার উল্টো দৃশ্যই বেশি চোখে পড়ছে। এবার বার্সেলোনা বিমানবন্দর থেকেই ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়ল। পুরোপথে একজন যাত্রীর অন্যতম সঙ্গী এয়ারলাইন্সের টিভি। রিমোট ঠিকই আছে। যদিও টেলিভিশনের চলচ্চিত্র ও গানের সেই একই তালিকা। সেই টিভিতে বাধল গোল। স্ক্রিন সাদাকালো। ভাবলাম আমার টিভি স্ক্রিনেরই হয়তো এই দশা।

কিছুক্ষণ পর ওয়াশ রুমের যাওয়া-আসার পথে বিষয়টি ভালো করে চেক করলাম। খুঁজে খুঁজে আরো সাদাকালো টিভি পেলাম। যথারীতি যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত কেবিন ক্রু একজনকে ডেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলাম, সদুত্তর মিলল না। আসলে ওই ক্রু তা দেবেন কিভাবে, কারণ কেবিন ক্রুর কাজ খাবার দেওয়া, কম্বল দেওয়া আর নেওয়ার মধ্যেই সীমিত। কেবিন ক্রুতো আর প্রকৌশলী নয়। ওটি মেরামত করার দায়িত্ব ছিল এয়ারওয়েজের প্রকৌশল শাখার ওপরে। তারা কাজটি করলে আর এই ভোগান্তি পোহাতে হত না।

একবিংশ শতাব্দীর তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এসে ষাটের দশকের মতো সাদাকালো টিভি স্ক্রিনে চোখ রেখেই শেষ হল বার্সেলোনা টু দোহার যাত্রা।

বার্সেলোনায় ৭ দিন কাটিয়ে দেশে ফেরার জন্য মনটা ছটফট করছে। কত দ্রুত দেশে ফিরব মনে শুধু সেই তাড়না বারবার উঁকি দিচ্ছে। মন চাইলেই আর সবকিছু পাব তাতো নয়। তবে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী দোহায় প্রায় আড়াই ঘন্টার ট্রানজিট শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফ্লাইট ছাড়ার কথা ছিল। বিধিবাম। আবারো ফ্লাইট বিলম্ব। এক ঘন্টার বিলম্ব দেড় ঘন্টায় উন্নীত হল। বোর্ডিং পার করে দোহা বিমানবন্দরের সবচেয়ে বিরক্তির বাস যাত্রা। বাসের খোঁজ নেই, বসার চেয়ারও নেই। হাতে গোনা কয়েকটি চেয়ারমাত্র। নারী-শিশু ও বৃদ্ধ থেকে সবাই দাঁড়িয়ে।

অথচ দোহা থেকে বার্সেলোনার পথে বোর্ডিং পার হয়ে এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি। এবার সবকিছুই উল্টো। কারণ আমরা তো সবাই বাংলাদেশের যাত্রী। এতো তোয়াক্কা কেন করতে হবে আমাদের। সবাইতো শ্রমিক।

অবশেষে বাস এলো। বাইরে থেকে এয়ারবাস এ ৩৩০ উড়োজাহাজের চেহারা দেখে ভালোই মনে হল, ভেতরের কন্ডিশনটা মোটামুটি। তবে এর চেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে তা জানা ছিল না। সিটে বসতে গিয়েই থেমে গেলাম। সিটের ওপর চকলেটের খোসা, হেডফোন, বোর্ডিং কার্ডের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। শুধু আমার সিটই নয়, সবগুলো সিটেরই একই হাল। সিটের নিচেও এ ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি। তাহলে কি এই ময়লা সিটের মূল্য দেড় লাখ টাকা।

এই উড়োজাহাজটি লন্ডন থেকে এসেছে। এর ভেতরে ভালো করে পরিস্কার না করেই এটি যাচ্ছে ঢাকায়। বাংলাদেশের যাত্রী বলেই কি কাতার এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের এই আচরণ। ভাবলাম কেবিন ক্রুকে ডেকে জিজ্ঞাসা করি। পরে সেই চিন্তা বাদ দিলাম। কারণ তার কাছ থেকে এর কোনো সদুত্তর মিলবে না।

উড়োজাহাজ ছাড়ল ঢাকার উদ্দেশ্যে। টেলিভিশন অন করলাম। টেলিভিশনের পাশাপাশি উড়োজাহাজের যাত্রীদের সবারই কমবেশি খেয়াল থাকে কখন এটি গন্তব্যে পৌছাবে, এখন কোন দেশের ওপর দিয়ে যাচ্ছি, কত হাজার ফুট উঁচু দিয়ে যাচ্ছি, কত মাইল বেগে এটি চলছে। যেহেতু উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে মেঘ ছাড়া কিছু দেখা যায় না, তাই এ ধরনের বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক।

তবে সেই আগ্রহের কোনো পূর্ণতা মিলল না। এসব দেখতে টিভি স্ক্রিনের লিস্টে স্যাটেলাইট ম্যাপে যেতে হয়। এই অপশনে গিয়ে দেখলাম স্যাটেলাইট ম্যাপ কাজ করছে না। বাড়ি ফেরার জন্য আমাদের টিমের বাকি ৭ জনেরই মনটা উশখুশ করছে। জানতে ইচ্ছে করছে এখন কোথায় আছি, আর কতক্ষণ লাগবে। ধৈর্য্য ধরতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত কেবিন ক্রুকে ডাকলাম। একজন ভারতীয় নাগরিক দেখে মনে করলাম নিশ্চয়ই সমাধান পাব। অন্তত বিদেশিদের চেয়ে আমাদের প্রতি ওরা একটু বেশিই সদয় হবে। কিন্তু হল না। কাতার এয়ারওয়েজের সেবা এরকমই, কোন দেশের নাগরিক সেটি মূখ্য বিষয় নয়।

কেবিন ক্রু উত্তর দিলেন এটি কাজ করছে। আমি তাকে ভালো করে দেখতে বললাম। সে আবারও একই উত্তর দিল। তাজ্জব বনে গেলাম ক্রুর এই কথায়। আসলে সে নিজেকে রক্ষা করতে এভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেল। বাংলাদেশ বিমান কিংবা দেশের অন্য বেসরকারি এয়াররাইন্সে পরিচিত যে ক’জন কেবিন ক্রু রয়েছে তাদের কাছ থেকে জানাই ছিল, কোনো  সমস্যায় পড়লে তারা কিভাবে এড়িয়ে যান। সেই একই থিওরি প্রয়োগ করল কাতার এয়ারওয়েজের এই ক্রু।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।