ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

শাহজালালে হচ্ছে দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টার্মিনাল

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৯ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৪
শাহজালালে হচ্ছে  দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টার্মিনাল ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: দুটি রানওয়ে দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওঠানামা করবে উড়োজাহাজ। বর্তমান দুটি টার্মিনালের সঙ্গে যোগ হবে প্রায় চারগুন বড় আকারের আরও একটি টার্মিনাল।

নতুন টার্মিনালে বসবে আরও ৩২টি বোর্ডিং ব্রিজ। বাড়বে বিমানবন্দরের ড্রাইভওয়ে। এর মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বেড়ে যাবে বর্তমান ক্ষমতার চার গুন।  

দিনে প্রায় এক হাজারটি উড়োজাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম হবে এই বিমানবন্দর। যা আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিভিন্ন ব্যস্ত বিমানবন্দরের সমান।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)জানিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্রমবর্ধমান যাত্রীচাপ সামলাতেই নির্মিত হচ্ছে দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টার্মিনাল। যে জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ প্রায় সম্পন্ন।  

ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভায় প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে পরামর্শক নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানায় বেবিচক। আর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আগামী দেড় বছরের মধ্যে রানওয়ে ও টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

এনিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বেবিচকের পরিচালক (এটিএস) আজাদ জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, দেড় বছরের মধ্যে কাজ শুরু হলে আগামী পাঁচ বছর পর নতুন রানওয়ে ও টার্মিনাল ব্যবহার উপযোগী হবে।

বেবিচকের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি) উইং কমান্ডার নাজমুল আনাম বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রী বাড়ার কারণে এই ব্যাপক উন্নয়নে কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।  

দেশের এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সব বিমানবন্দরের অভিভাবক এই বেবিচকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বছরে ৬০ লাখ যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। প্রতি বছরই এই সংখ্যা গড়ে ৫ লাখ করে বাড়ছে। একইভাবে অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ রুটে ৬ লাখের মতো যাত্রী ব্যবহার করছে দেশের প্রধান বিমানবন্দর।

বেবিচক বলছে, শাহজালালে বর্তমানে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৪০টি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। নতুন রানওয়ে, টার্মিনাল ও বোর্ডিং ব্রিজ নির্মিত হলে এর চারগুন বাড়িয়ে প্রায় এক হাজার উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ সম্ভব হবে।

প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি মানের একটি বিমানবন্দরে পরিণত হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

দু্বাই বিমানবন্দরের মতো দুটি প্যারালাল রানওয়ে হয়ে গেলে এবং তৃতীয় টার্মিনালটির নির্মাণ হলে তাতে আরও ৩২টি বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। বর্তমান ৮টি বোর্ডিং ব্রিজসহ মোট ব্রিজের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০টি। এই সক্ষমতা আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনগুলোকে আকৃষ্ট করবে। তাতে বিমানবন্দরের ব্যস্ততা যেমন বাড়বে, আয়ও বাড়বে, এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।  

শাহজালালের বর্তমান রানওয়েটি গেল বছর মেরামত (ওভারলে) করা হয়। এটি ছিল দ্বিতীয় দফায় মেরামত, যার মাধ্যমে আগামী ১৪ বছর পর্যন্ত এটি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। এরপর এই রানওয়েটি আর মেরামতযোগ্য থাকবে না। তখন  নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।

বেবিচক জানায়, তাই ওই সময়ের আগেই নতুন রানওয়ে নির্মাণ শেষ হবে। এতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।  

New_runwayবেবিচকের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি) উইং কমান্ডার নাজমুল আনাম জানান, এই বিষয়টি মাথায় রেখেই বেবিচক নতুন রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্তমান রানওয়েটির সমান্তরালেই নতুনটি নির্মিত হবে। এতে করে শাহজালালে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সংখ্যা আরো বাড়লেও তা ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হবে না।

প্রায় দুই দশক আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের প্রধান বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল। পরবর্তীতে এই কাজটি আর এগোয়নি। তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উৎসাহেই বিমানবন্দর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর এই উদ্যোগ নেওয়া হলো।  

বেবিচক সূত্র জানায়, দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টার্মিনালের পাশাপাশি এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইমিগ্রেশন ডেস্ক বাড়ানো, ব্যাগেজ হ্যান্ডলিংসহ প্রতিটি স্তরে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ রয়েছে এই পরিকল্পনার আওতায়।

শাহজালালের য‍াত্রীসেবা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। এক সঙ্গে তিনটি থেকে চারটি উড়োজাহাজ বিমানবন্দরে অবতরণ করলেই যাত্রীদের সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এইসব অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে ওঠার বিষয়টিও নতুন কর্ম পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

তবে ধাপে ধাপে বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজও কম হয়নি। বেবিচক জানায়, ১৯৮২ সালে শাহজালাল বিমানবন্দর যখন যাত্রা শুরু করে তখন প্রতিদিন গড়ে ৬০টি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করতো। তখন মাত্র ৩টি পার্কিং নিয়ে এই বিমানবন্দরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে পার্কিং সংখ্যা ২৯টি।   

এদিকে ডেনমার্কের অর্থায়নে ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ, রানওয়ে মেরামতসহ ৫৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অরগানোগ্রামে ৭ হাজার শ্রমশক্তি নিয়োগের সুযোগ থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৩ হাজার শ্রমশক্তি নিয়োগ রয়েছে। নতুন অবকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তি নিয়োগ করে সেবার প্রতিটি স্তরকে আধুনিক ও উপযোগী করে তোলা হবে বলেও বাংলানিউজকে জানায় বেবিচক।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বর্তমানে তার মোট ক্যাপাসিটির ৪০ ভাগ ব্যবহার করছে। নতুন অবকাঠামো স্থাপন ও ব্যবহারের জন্য আরও ৬০ শতাংশ স্থান রয়ে গেছে বলে জানায় বিমানবন্দর সূত্র। ১৯৮১ একর জমি ঘিরে রয়েছে এই বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর।

বাংলাদেশ ০৯২৬ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।