ঢাকা: অবিশ্বাস্য শর্তে প্রায় ৫০ কোটি টাকা অগ্রিম দিয়ে উত্তর আফ্রিকার দেশ মিশর থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
দু’টি উড়োজাহাজের জন্য বিমানকে প্রতিমাসে ভাড়া গুণতে হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
উড়োজাহাজ দু’টি এরই মধ্যে বিমানের বহরে যুক্ত হয়েছে।
এ উড়োজাহাজ দু’টি আনতে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ, ফ্লাইট অপারেশন পরিচালক ক্যাপ্টেন ইশরাত, ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল, প্রধান প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরীসহ বিশাল লটবহর নিয়ে মিশরে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রধান প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরী প্রায় এক মাস মিশরে অবস্থান করেন। মিশর এয়ারের ৮ জনের একটি টিম উড়োজাহাজ দু’টির সবকিছু বুঝিয়ে দিতে বর্তমান ঢাকায় অবস্থান করছেন।
বিমানসূত্রে জানা গেছে, ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল চক্রই এ উড়োজাহাজ আনতে যোগাযোগ করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিমানের ইতিহাসে একসঙ্গে এতো টাকা অগ্রিম দিয়ে উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়া খুবই নজিরবিহীন ও রহস্যজনক।
বিমানের এক পদস্থ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, পরিকল্পনহীনভাবে বিমান এই দু’টি উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়েছে। কারণ, ৫ বছরে বিমানকে লিজদাতা কোম্পানিকে যে পরিমাণ টাকা দিতে হবে তার চেয়ে কম টাকা দিয়ে এর চেয়ে কম বয়সী উড়োজাহাজ কেনা সম্ভব ছিল।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। পর্যটকরা এখনো মিশরকে নিরাপদ মনে করছেন না। সে কারণে পর্যটক আসা অনেক হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় ইজিপ্ট এয়ারের ব্যবসায় ধস নেমেছে।
নিজেদের এ আর্থিক দুর্গতি থেকে উদ্ধার করতে বিমানের কাছে দু’টি পুরোনো উড়োজাহাজ গছিয়ে দিয়েছে ইজিপ্ট এয়ার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেভিন স্টিল দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বছরে বিমান ২১৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে বিমানের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২২ কোটি টাকা। যেভাবে চলছে তাতে লোকসানের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে বিমানের দেনা রয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে।
অর্থের অভাবে বিমান এয়ারবাসের মেরামত করা ইঞ্জিন আনতে পারছে না। এমনিতেই দেনা ও লোকসানের ভারে জর্জরিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দেনা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েও সাড়া মেলেনি।
যে মুহূর্তে টাকার জন্য বিমান দেউলিয়া হওয়ার পথে সেই সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত রহস্যজনক। যে মুহূর্তে সরকারের কাছে হাত পেতেও টাকা পায়নি, সেই মুহূর্তে একটি লিজদাতা কোম্পানিকে মোটা অংকের টাকা নগদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিমানের সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে।
মূলত বিমানের লিজ সিন্ডিকেট চক্র কমিশন বাবদ একটি বড় টাকা হাতিয়ে নিতেই আর্থিক সংকটের মধ্যেও এই উড়োজাহাজ আনতে মূল ভূমিকা রেখেছে। তাছাড়া এই বিপুল অংকের অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে ক্যাশে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনের লাইনটি কেটে দেন। আর চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ এ মুহূর্তে সিঙ্গাপুর সফরে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৪