ঢাকা: সরকারি মালিকানাধীন হোটেল রূপসী বাংলা বন্ধের আগেই চাকরি হারাচ্ছেন এর ১১৫ জন কর্মী। হোটেলটি পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া ইন্টারন্যাশনাল হোটেল চেইন ইন্টারকন্টিনেন্টাল অঙ্গীকার করেছিল এর কোনো কর্মী চাকরি হারাবেন না।
এরই মধ্যে হোটেলে কর্তৃপক্ষ তালিকা করা ১১৫ জন কর্মীকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কাগজে-কলমে কোনো ডকুমেন্ট রাখা হচ্ছে না।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে এতথ্য জানা গেছে।
হোটেল সূত্রে জানা গেছে, ছাঁটাইকৃত কর্মীদের একটি বড় অংশ হোটেলের হাউজ কিপিং এবং ফুড অ্যান্ড বেভারেজ বিভাগের কর্মী। চাকরিচ্যুতরা সবাই ক্যাজুয়াল। তাদের বেশিরভাগ কর্মী প্রায় ৫ বছর ধরে কাজ করছেন। চাকরি স্থায়ী হবে- এ আশায় তারা বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছিলেন।
হোটেলের একাধিক কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, এখানে ক্যাজুয়াল হিসেবেই কর্মীদের চাকরি শুরু হয়। পরবর্তীকালে এদের চাকরি স্থায়ী করা হয়। এভাবে কয়েক বছর চাকরি করার পর কর্মীদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তাদেরকে মৌখিকভাবে ছাঁটাইয়ের কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ৩১ মের পর আর তাদের প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাঁটাই হওয়া এক কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, ৫ বছর চাকরি করার পর আমরা যখন আশা করছি, চাকরি স্থায়ী হবে, তখন আমাদের বাদ দেওয়া হলো। এখন আমরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবো?
তিনি বলেন, এ হোটেলের মালিক সরকার। কিন্তু সরকারের কথায় নয়, বিদেশিদের কথায় আমাদের চাকরি চলে যাচ্ছে। ইন্টারকন্টিনেন্টালের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই আমাদের পথে বসতে হচ্ছে। অথচ কারো চাকরি যাবে না এ ওয়াদা শেরাটন কর্তৃপক্ষ মানতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে চলে যেতে হয়েছিল। আর ইন্টারকন্টিনেন্টাল ওয়াদা করেও তা রাখছে না।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের জেনারেল ম্যানেজার জেমস ম্যাকডোনাল্ড বাংলানিউজের কাছে কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি এ-ও বলেন, যাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে তাদের কেউই স্থায়ী নন। যদি প্রয়োজন হয়, সংস্কারের পর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
হোটেলটিতে বর্তমানে প্রায় ৬৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে ২৮৮ জন কর্মীকে বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে (বিআইসিসি) স্থানান্তর করা হবে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘বলাকা’ রেস্টুরেন্টে ৬০ জনকে স্থানান্তর, ৬০ জনকে ইন্টারকন্টিনেন্টালের কাজে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হবে এবং ১০০ জনকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সংস্কার কাজে নিয়োজিত করা হবে। বাকি ১১৫ জনকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। সংস্কার শেষে সাময়িকভাবে স্থানান্তর হওয়া কর্র্মীরা ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়োগ পাবেন।
রূপসী বাংলা হোটেলটি আগামী ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল। চুক্তি অনুযায়ী বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হবে। এতে প্রায় দুই বছর সময় লাগবে। আর এ সময় হোটেলটি পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। সংস্কার শেষে ২০১৪ সালের শুরুতে হোটেলটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামে চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কারণে এ কাজ পিছিয়ে যায়।
নতুন করে সাজানো সময়সূচি অনুযায়ী চলতি বছরের শেষের দিকেই হোটেলের কাজ শুরু হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে রূপসী বাংলা হোটেলে কোনো বুকিং নেওয়া হবে না। কিন্তু বুকিং বন্ধ হওয়ার তিন মাস আগে এসব কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ২৭ বছর হোটেল পরিচালনা শেষে শেরাটন ২০১১ সালের ১ মে বিএসএলকে হোটেলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়। ওইদিন থেকেই হোটেলটি পরিচালনা দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল)। এ সময় হোটেলটির নতুন নামকরণ করা হয় রূপসী বাংলা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৪