বিছনাকান্দি থেকে ফিরে: স্বচ্ছ জলে ছড়িয়ে আছে সফেদ রূপের বাহার। পাথর-কণায় লুকিয়ে থাকা জলতলের সৌন্দর্য মেলে ধরেছে প্রকৃতি।
পাহাড়ের খাঁজের নিচে বিছনাকান্দি গ্রাম। গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথর। পাথুরে বালুর ওপর দিয়ে গড়িয়ে বাংলাদেশের খাল বিলে প্রবাহিত হচ্ছে সেই জল। এই জলের উৎসমুখ বিছনাকান্দি। ছোট-বড় বিশালাকায় পাথরের সাথে পানির স্রোতের তোড়ে যে কারও মন ভেসে যেতে পারে। ব্যক্তি নিজেও ভেসে যেতে পারে সাদা পানির আঁচড়ে। স্বচ্ছতা দেখে স্নান না করে ফিরতে পারেন না কেউ।
পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় এ পানিতে কাদা নেই মোটেও। বালুকণা আর পাথুরে ভরা শীতল জল। ডুব দিলেই রূপ মেলে ধরে। সাগরতলের মণিমুক্তার মতো এক জগত সামনে এসে দাঁড়ায়। বার বার তাই ডুব দিয়ে দেখতে হয় রূপ জল।
এখনও ততটা পর্যটকের ভিড় নেই রূপের ডালি বিছনাকান্দিতে। অনেকের অজানা এই রূপময় বিছনাকান্দি যাওয়ার পথটাও একটু কঠিন। তাই এতদিন ধরে আড়ালেই থেকে গেছে তার রূপের জাদু। ভ্রমণপিপাসু কেউ কেউ খুঁজে বের করে দিন কাটিয়ে আসছেন সেই পাথুরে রূপের জগত বিছনাকান্দিতে।
পাহাড়-পাথর আর নদীর মিতালীতে বিছনাকান্দি ভরা যৌবন রূপ বর্ষায়। তবে সারা বছরই পাথর ছুঁয়ে পাহাড়ি ঢল নামতে থাকে বিছনাকান্দিতে। সেই জলের শুভ্রতা শান্ত করে দেয় ভ্রমনপিপাসু মন। যান্ত্রিকতাকে দূরে ঠেলে দিতে পারে-এমন স্থানই বিছনাকান্দি।
সিলেট থেকে বিমানবন্দর সড়ক ধরে তারপর সালুটিকর মোড় ঘুড়ে সব মিলিয়ে দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিলেই বিছানকান্দি চলে যাওয়া য়ায়। তার আগে পথে পথে গ্রামীণ সৌন্দর্য। বিলে-ঝিলে ধরা পড়ছে মাছ।
সালুটিকর থেকে সরু সড়কপথে প্রায় বিশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাদারপাড়া বাজারে থেমে যায় গাড়ি। বাকিপথ হেঁটে অথবা নৌকায় যেতে হয়। এই পথ মাত্র দুই কিলোমিটার। এর পরেই পাথুরে পথ মারিয়ে যেতে হয় বিছনাকান্দি।
তার আগেই শত শত ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দে উঠে আসবে রূপ বাংলার ছবি। দূর পাহাড়ের ভাঁজ দেখে শুরু হবে পথচলা। সেই ভাঁজ পেছনে রেখে ছবি তুলে নিয়ে ছুটতে ছুটতে জলে ঝাঁপ দেওয়ার লোভ সামলানো দায়।
বিছনাকান্দি পৌঁছলেই সামনে পড়ে সুউচ্চ মেঘালয়ের পাহাড়। দুই পাহাড়ের ভাঁজ বেয়ে গড়িয়ে নামছে জল। সেই জল রূপ ধরেছে বিছনাকান্দির পাথর ছুঁয়ে। আর তখনই প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্যই মেলে ধরছে বাংলাদেশের মানুষের কাছে।
পাহাড়ের অপর পাশে আছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি পাহাড়ি হাট। স্থানীয় খাসিয়ারা এখানে সপ্তাহে দু’দিন নানা পসরা নিয়ে বসেন। দু’দিনই এই হাট খোলা থাকে বাংলাদেশের জন্য। চলে কেনা-বেচা।
বিছনাকান্দির রূপের ছবি তোলা ভুলে শুভ্র জলে ইচ্ছেমতো সাঁতার কাটছেন সিলেটের একজন আলোকচিত্রী খালেদ আহমদ। প্রথমবারের মতো তিনি বিছানাকান্দির রূপে অবগান করেই গা ভাসালেন পাথরে জলে। ভুলেই গেলেন ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক করার কথা।
বিকেলে যখন ফিরে যাচ্ছেন তখন তিনি বললেন, ‘আবার আসতে চাই’।
তার সঙ্গী সৌখিন আলোকচিত্রী রেজওয়ান আহমদ চৌধুরীও ক্যামেরা রেখে পাথর আঁকড়ে ধরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন প্রকৃতির মাঝে।
আরেকজন নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালেয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী ইমাদুল ইসলাম তানভীর সাঁতার কেটে ভেসে যাচ্ছেন আবার কখনো বিশালকায় পাথরে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন।
যান্ত্রিক শহরের ছোঁয়া থেকে দূরে শীতল পরশ গায়ে লাগিয়ে তারা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছেন। ভুলে গেছেন ফিরতে। বেলা গড়ালেও বিছনাকান্দির রূপ আঁকড়ে ধরেছে তাদের।
দিনভর কাটিয়ে নির্মল অবারিত আনন্দ পেতে এখন যে কারও পছন্দের স্থান হতে পারে রূপমাধুরী বিছনাকান্দি। প্রকৃতির অপ্সরা বিছানাকান্দি সব সময়ই মেলে ধরে তার রূপ।
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৪