এক ঋতুর দেশ মালয়েশিয়া। সর্বত্রই যেনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছটা।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের কেএলসিসিতে আকাশছোঁয়া টুইন টাওয়ার। যেটা কিনা ৮৮ তলা বিশিষ্ট। মেট্রো রেল, দীর্ঘ ফ্লাইওভার, প্রশস্ত সড়ক দেখে মুগ্ধ হবে যে কেউ। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে যা দেখেছি, দু'চোখে শান্তি অনুভব করেছি। গোটা দেশ জুড়েই পাহাড় ও জঙ্গল। এই জঙ্গলের ভেতর অথবা আশপাশে বন্য প্রাণীদের মধ্যে বানরের আনাগোনা লক্ষ্য করার মতো।
বানরগুলো মিশুক প্রকৃতির। মানুষের সঙ্গে বেশ সখ্য তাদের। এছাড়া গভীর জঙ্গলের ভেতর সাপ এবং হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। আজ সবাইকে জানাচ্ছি মালয়েশিয়ার একটি বানর পাড়ার গল্প।
কিছুটা দূরে ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়লাম। জায়গাটি সম্পর্কে বর্ণনায় প্রথমেই বলতে হয়, গাছ-গাছালির ছায়া ঘেরা পরিবেশ। সড়ক ঘেষে উঁচু পাহাড়। দেখে মনে হয়েছে পাহাড়ের বয়স কম হলেও শত বছর পেরিয়েছে। সব কিছুর মাঝে ক্ষণিকের জন্য কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলাম আমাদের মতো আরো অনেকেই বানরের সাথে সময় কাটাতে একে একে সেখানে আসছেন। একটি দু'টি বানরও দেখা যাচ্ছিল।
সবার নিশ্চিই এতক্ষণে জায়গাটি কোথায় জানতে কৌতূহল হচ্ছে। জায়গাটি হচ্ছে- কুয়ালালামপুরের আম্পাং জায়া। জালান রেশমির দারুল এহসান গলফ ক্লাবের পাশে। সড়কটিতে গিয়ে দেখা মিলল ছোট-বড় শত শত বানরের। আরো দৃষ্টিতে পড়ল, সড়কের পাশে মাটিতে বিভিন্ন রকমের ফলমূল পরে আছে বানরদের খাওয়ার জন্য। কিছু গাছে দড়িতে বেধে টায়ার ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাতে ছোট ছোট বানর ঝুলে ঝুলে খেলছে।
জায়গাটি কোনো চিড়িয়াখানা নয়। স্বেচ্ছায় বানরগুলো এখানে তাদের ঘাটি বানিয়েছে। স্থানীয়দের কাছে জেনেছিলাম বানরগুলো পাশের পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতর থেকে এখানে এসেছে। সড়কটিতে মানুষের আনাগোনা থাকুক বা না থাকুক বানরের আনাগোনা থাকে সর্বক্ষণ। তাই বলা চলে এটি বানর পাড়া।
বানরের বাদরামি দেখতে অসংখ্য মানুষ এসেছেন বানর পাড়ায়। সবার মাঝে শুধু আমাদের দুজনকেই বাঙালি বলে মনে হয়েছে। প্রায় সবাইকে দেখলাম বানরকে খেতে দেওয়ার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। যারা এই পাড়াটির সাথে পূর্বে থেকেই পরিচিত তারা এখানে এলে বানর গুলোর জন্য খাবার নিয়ে আসে। কেউ কেউ প্রতিদিন খাবার দেয়।
গোটা পাড়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক বানর চোখে পড়ল আমাদের। অন্যসব বানরের মতো অপরিষ্কার নয় একানকার বানরগুলো। বেশ পরিষ্কার-পরিছন্ন। মালয়েশিয়াতে প্রতিদিন বৃষ্টিপাত হয় বলেই হয়ত বানরগুলো এতোটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
বাদামের প্যাকেট কিনে তা থেকে ক'টি বাদাম বাচ্চা একটি বানরকে উদ্দেশ্য করে ছুড়ে মারতেই একদল বড় বানর আমাকে ঘিরে ধরল। তাদের আচরণে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম তারা কি চায়। আর তাই বেশি চালাকি না করে পুরো বাদামের প্যাকেট মাটিতে ছুড়ে ফেলে তবেই মুক্তি পেলাম।
মানুষের সঙ্গে বানরগুলোর আচরণ বন্ধুসুলভ বলেই মনে হয়েছে। তারা মানুষের কাছ ঘেঁষে হাঁটছে, আবার কোনোটি মানুষের সঙ্গে বসে আছে এমন দৃশ্যও দেখলাম।
হটাৎ দেখতে পেলাম, একটি বড় মাপের বানর দৌঁড়ে এদিকে আসছে। তা দেখে অন্যসব বানরেরা ভয়ে যেন জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছে। কোনোটি লাফিয়ে গাছে উঠছে, কোনোটি দৌড়ে নিরাপদ দূরত্ব খুঁজছে। অন্যসব বানরের চোখে মুখে একটা স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ দেখলাম।
পরে জেনেছিলাম, বড় বানরটি এই বানর পাড়ার রাজা। অত্যাচারী রাজা। অন্যসব বানর তাকে ভয় পায়। বড় বানরটির আনাগোনা নাকি সব সময় দেখা যায় না। শুধু ক্ষুধার্ত থাকলেই তার আগমন হয়। তখন তার সানিধ্যে কোনো বানর এলে মার খেয়ে আহত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এছাড়া অন্য বানরের হাত থেকে খাবার কেড়ে নেওয়া তার প্রতিদিনের স্বভাব।
বড় বানরটির সব কিছুতেই অন্যরকম বিনোদন অনুভব করলাম। মুহুর্তেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সে দর্শনার্থীদের আলোচনার বিষয় হয়েছিল। পাশাপাশি কতজন তাকে ক্যামেরাবন্দি করতে বাটন টিপেছে ক্লিক ক্লিক ক্লিক। স্থানীয়রা এই বানরটিকে ওসামা বিন লাদেন নামে ডাকে। লাদেন যখন চলে গেল তখন অন্য বানরগুলো একে একে ফিরে এলো, গাছ থেকে নামতে থাকলো। শুনতে পেলাম রাজত্ব ফিরে পাওয়ার উল্লাসধ্বনি।
প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।
আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।
প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৪