ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

প্লেনের জানালায় স্বপ্নের মাউন্ট এভারেস্ট

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৭
প্লেনের জানালায় স্বপ্নের মাউন্ট এভারেস্ট হিমালয়ের পাদদেশে আকাশছোঁয়া সব পর্বতের আড়াল দিয়ে নেমে যায় রিজেন্টের আরএক্স ৭৯৫ ফ্লাইট

কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে: ৩৯ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে থাকা প্লেনের ক্যাপ্টেনের কণ্ঠ ভেসে এলো, “ডানদিকে যারা আছেন তারা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট।” বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। ক্যাপ্টেনের কথা মতো চোখ গেলো প্লেনের জানালায়।

তিনি বলে চললেন, “লক্ষ্য করুন ঠিক মেঘের নিচে। মাউন্ট এভারেস্টের রঙ এখন কালচে গোলাপি।

চোখের পাতা এক করতে পারলাম না। মন দিয়ে দেখছিলাম স্বপ্নের হিমালয় কন্যাকে।

একপলকে মনটা উদাস হয়ে গেলো। কিছুদিন আগে হিমালয়ের বুকে হারিয়ে গেছেন কলকাতার বাঙালি পর্বতারোহী ছন্দা গায়েন। যার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিশেষ টিম পর্যন্ত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন নেপালে।

কিন্তু ছন্দাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পর্বতপাগল ২২ বছরের এ অভিযাত্রী যেন মায়ের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেছেন।

জন্মদাত্রী মায়ের কান্নায়ই রাজ্য সরকারের টিম এসেছিলো নেপালে। খালি হাতে ফিরে গিয়ে যখন বললো ছন্দাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তার সে কি আহাজারি। মায়েরা তো এমনই হন। তাতে কী, হাজার ছন্দা তো তবু এই পাহাড়ের টানে প্রতিদিন আসেন হিমালয়ের বুকে। তাই ঠিক পনেরো মিনিট চোখ ফেরানো গেল না প্লেনের জানালা থেকে।

ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে এক ঘণ্টা ত্রিশ মিনিটে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের অসাধারণ আতিথেয়তায় পা পড়লো নেপালে। হালকা বৃষ্টি আর কনকনে ঠাণ্ডা জানান দিচ্ছিলো, এটা হিমালয়কন্যা। ঢাকা বা কলকাতা নয়। শীত বস্ত্র ছাড়া এখানে প্রবেশের অধিকার নেই যেন। ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাগেজের জন্য অপেক্ষা।

কর্মরত এক এয়ারপোর্ট কর্মীর কাছে লাগেজ কোন বেল্টে জানতে চাইলে সুন্দর হিন্দিতে তার উত্তর, ‘মনিটর লক্ষ্য করুন, দেখেতে পাবেন’। টানা বিশ মিনিট লক্ষ্য করেও লাগেজের হদিস পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে সহকর্মী জানালেন, লাগেজ দিয়ে দিয়েছে।
হিমালয়ের পাদদেশে আকাশছোঁয়া সব পর্বতের আড়াল দিয়ে নেমে যায় রিজেন্টের আরএক্স ৭৯৫ ফ্লাইট
অবাক হতেই হলো, তাহলে মনিটর কী করে? তার মানে কি মনিটর লক্ষ্য করে লাভ নেই? যথাসময়ে নির্ধারিত গাড়িতে চড়ে একটানে হোটেল। সুন্দর পরিষ্কার হোটেল তিব্বত পিস ইন।

নেপালিরা চিরকালই শান্ত-ভদ্র। তবে এখানকার রাস্তা জানান দিচ্ছিল, আর কয়েকঘণ্টা পর বর্ষবরণ ২০১৭ সালের। তাই লাগেজটা রেখে বের হাওয়া পুরনো বছরকে বিদায় দিতে।

বাঙালি অভ্যাস খাওয়া ছাড়া না বিদায় না আগমন। কাঠমান্ডু শহরে খেতে বসে সহকর্মী যখন তার মাকে খাইয়ে দিচ্ছিলেন, মনটা অস্থির হয়ে উঠলো।   মনে পড়লো, নিজের মা মা  কেমন আছে।

কর্মসূত্রে অনের দিন মায়ের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে হচ্ছে। আজ আবার বছর শেষ। এই মুহূর্তেও মা নেই পাশে। আফসোস-আক্ষেপ ঠেলে মাকে ফোন, ‘ভালো আছো মা? তোমাকে মনে পড়ছে’। মা হেসে বললেন, ‘আমিতো তোর সাথেই আছি। কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি আয়। ’

সব মা-ই বুঝি এমন হন। ভালো থাকুন এই মায়েরা। শুভ নববর্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।