ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

ষাটগম্বুজ মসজিদে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
ষাটগম্বুজ মসজিদে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে

বাগেরহাট: শীত মৌসুমে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে। মুসলিম স্থাপত্যের এই অনন্য নিদর্শন দেখতে প্রতিদিনই  দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক আসছেন বাগেরহাটের ষাটগম্বুজে।

অন্যান্য দিনের তুলনায় ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এই স্থাপনায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, কেউ পরিবারপরিজন নিয়ে, কেউবা একা এসেছেন বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ দেখতে। প্রায় সাড়ে ৬শ’ বছর আগে নির্মিত মসজিদ, মসজিদ চত্বরে থাকা যাদুঘর, বিভিন্ন রাইডস, প্রশস্ত সড়ক, নানা জাতের ফুল এবং মসজিদের পশ্চিম পাশের বিশালাকৃতির ঘোড়াদিঘী দেখে মুগ্ধ সবাই। তবে সংখ্যা বেশি হওয়ায় দর্শনার্থীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শীত আসার আগ মুহূর্ত থেকেই ষাটগম্বুজ মসজিদে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রচুর দর্শনার্থী আসেন এই স্থানে। এছাড়া সারাবছরই কমবেশি দর্শনার্থী ষাটগম্বুজ পরিদর্শন করে থাকেন। এবছর ১৯ আগস্ট থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮০ জন বিদেশিসহ মোট এক লাখ ১০ হাজার ৫৩০ জন দর্শনার্থী  ষাটগম্বুজ পরিদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ টাকা রাজস্ব আয় করেছে সরকার। বিপুল সংখ্যক এই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক সহযোগিতায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশও দায়িত্ব পালন করছেন।

সিরাজগঞ্জ এলাকার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিলা আক্তার বলেন, এই প্রথম ষাটগম্বুজ আসলাম। ভাইয়া, বড় আপুসহ মোট চারজন এসেছি। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সঙ্গে ছবি তুলতে পেরে খুব ভাল লাগছে।

ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী কারিশা নাদিয়া পুনম বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যেই রয়েছে বাগেরহাট যাদুঘর। যার ফলে এখানে আসলে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখার পাশাপাশি বাগেরহাটের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানা যায়। বাগেরহাট যাদুঘর ঘুরে, খানজাহান আমলের কুমিড়ের চামড়া দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে। সুযোগ পেলে আবারও আসতে চাই ষাটগম্বুজে।

টাঙ্গাইল জেলার আয়নাপুর এলাকা থেকে আসা রবিউল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বইয়ে ষাটগম্বুজ সম্পর্কে পড়েছি, টাকাতে  এই মসজিদের ছবি দেখেছি। এখন সামনা সামনি দেখে খুব ভাল লাগছে। বইয়ে যেটা পড়েছি, সেই শিক্ষাটাকে ঝালাই করেও নিতে পারলাম।

তিন বছরের শিশু সন্তান নিয়ে আসা হাফিজুর রহমান ও ময়না আক্তার দম্পতি বলেন, ষাটগম্বুজ এসে অনেক ভাল লেগেছে। তবে এই কমপ্লেক্সের মধ্যে শিশুদের জন্য আরও কিছু রাইডস এবং খাওয়া দাওয়ার জন্য বিশেষ জায়গা থাকলে খুব ভাল হত।

ঢাকা থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা ব্যবসায়ী খালিদ হোসেন বলেন, ষাটগম্বুজের আসপাশে উন্নত মানের কোনো আবাসিক হোটেল-মোটেল নেই। ভালমানের খাবার হোটেলও নেই এখানে। সুপেয় পানিরও সঙ্কট রয়েছে কমপ্লেক্সের মধ্যে। এসব সমস্যার সমাধান করতে পারলে আরও স্বাচ্ছন্দে বেড়ানো যেত।

আইনজীবী তুষার কান্তি বসু বলেন, ছুটির দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছি এখানে। ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখে আমাদের সবার খুবই ভাল লেগেছে। তবে বাগেরহাট যাদুঘরটিকে আরও সম্মৃদ্ধ করা প্রয়োজন।

মাওলানা ফারুক হোসাইন নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদে আসলে বোঝা যায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মুসলিমদের কী পরিমাণ দখল ছিল। সে আমলে ষাটগম্বুজ মসজিদের স্থাপত্যশৈলি যে কত উঁচু মানের তা অভিজ্ঞ স্থাপত্যবিদ ছাড়া বোঝার উপায় নেই। আমরা চাই যুগযুগ ধরে টিকে থাকুক মুসলিম ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ষাটগম্বুজ মসজিদ।

ট্যুরিষ্ট পুলিশ, বাগেরহাট জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালিউর রহমান বলেন, জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে দর্শনার্থীরা যাতে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারে সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কেউ যাতে কোনরকম হেনস্থা বা হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য টুরিষ্ট পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

বাগেরহাট জাদুঘরে কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থাপনা। এই স্থাপনার প্রতি দেশ-বিদেশের দর্শনার্থী ও গবেষকদের আগ্রহের কমতি নেই। যার ফলে প্রতিনিয়ত এখানে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল অনেক কম। যার ফলে দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে আমাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হয়। তারপরও আমরা সব সময় চেষ্টা করি দর্শনার্থীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে।

বাংলাদেশ  সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।