ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের(কেন্দ্রীয় কমিটি) সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ পর্যায়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।
আগামী ১০ ও ১১ জুলাই আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন প্রস্তুতির কাজও জোরেসোরে শুরু হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত প্রস্তুতি কমিটি ও উপ-কমিটিগুলোও ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। বাড়তে পারে দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য সংখ্যা। দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে বর্তমানে ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদ রয়েছে। এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১০১ সদস্য করা হতে পারে। এজন্য গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
সূত্রগুলো জানায়, কার্যনির্বাহী সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা বাড়তে পারে। বেশ কিছু সম্পাদকীয় পদ রয়েছে যেগুলো ভেঙে দু’টি করে পদ তৈরি করা হবে। যেমন, প্রচার ও প্রকাশনা, তথ্য ও গবেষণা ইত্যাদি পদগুলো ভেঙে আলাদা করা হতে পারে। এছাড়া দেশে নতুন তিনটি প্রশাসনিক বিভাগ করা হয়েছে। এ বিভাগগুলোতে একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করা হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য ও মন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, দেশের জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। দলের কাজও বেড়ে গেছে। জনসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দলের কাজের স্বার্থে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়তে পারে।
গত ০৪ মে জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদের আহ্বায়ক ও দলের কৃষি-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাকও কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি বাড়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের কয়েকটি বিভাগ বেড়েছে। যেহেতু দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বিভাগে একজন করে সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন, সেক্ষেত্রে এ পদের সংখ্যা বাড়াতে হতে পারে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও বাড়তে পারে।
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংশোধনী ছাড়াও গঠনতন্ত্রকে যুগোপযোগী করতে আরও কিছু পরিবর্তন আনার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে করার বিধান করা হয়েছে। সে অনুসারেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও দলের প্রার্থী মনোনয়ন সম্পর্কে গঠনতন্ত্রে কোনো নির্দেশনা নেই। ‘স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড’ নাম দিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংযোজন আনা হবে।
গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী ও উন্নত করতে গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদ কাজ শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে এ কমিটি কাজ করছে। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি ও কনজারভেটিভ পার্টি, ভারতের কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসসহ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্র রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। ওই সব দলের গঠনতন্ত্রের আলোকে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রকে আরও উন্নত ও আধুনিক করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সে অনুসারে সংশোধনী রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদ আগামী ১৫ জুনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে বলেও জানা গেছে।
এ ব্যাপারে গত ০৪ মে গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদের সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিশ্বের প্রচীন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি ও কনজারভেটিভ পার্টি, ভারতের প্রাচীন দল কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসসহ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র আমরা সংগ্রহ করেছি। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে গঠনতন্ত্র সংশোধন সংক্রান্ত রিপোর্ট চূড়ান্ত করবো।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৬
এসকে/এএসআর