ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে অধিকাংশ সংগঠনই চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি দিয়ে। বছরের পর বছর ধরে এসব সংগঠনের সম্মেলন হয় না।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭টি সংগঠন সহযোগী এবং ৩টি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলো হলো- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও তাঁতিলীগ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো হলো- ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ।
ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ছাড়া অন্য সব সংগঠনেরই কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দীর্ঘদিন হলো উত্তীর্ণ হয়েছে। এসব সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রতি তিন বছর পর পর কেন্দ্রীয় সম্মেলনের বিধান রয়েছে।
এদিকে কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ এসব সংগঠনের সম্মেলন সহসাই হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। কবে সম্মেলন হবে তা সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল নেতারাও বলতে পারেন না।
তাদের কাছে সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কেউ কেউ জানান, তারা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করা হয়। তিনি যখন সময় দিতে পারবেন তখনই সম্মেলন হবে বলেও জানান নেতারা।
আওয়ামী লীগের ৭টি সহযোগী সংগঠনের সবগুলোই বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। কোনো কোনোটি ১০ থেকে ১৬ বছর আগের কমিটি দিয়েই কোনো রকমে চলছে। এর ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে দায়সারাভাবে অংশ নেওয়া ছাড়া এসব সংগঠনের নিজস্ব কোনো কর্মসূচি নেই বললেই চলে। কোনো কোনো সংগঠন দিবসভিত্তিক দুই একটি কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে ২০০৩ সালের ১২ জুলাই মহিলা আওয়ামী লীগ, ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ যুব মহিলা লীগ, ২০০০ সালের ২০ জুলাই আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট তাঁতিলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসেবে মহিলা আওয়ামী লীগ ১৩ বছর, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতিলীগ ১২ বছর এবং আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ১৬ বছর কোনো সম্মেলন হয় না। যুব মহিলা লীগ প্রতিষ্ঠার পর একবার মাত্র সম্মেলন করেছে। ২০০২ সালে যুব মহিলা লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দুই বছর পর প্রথম এবং একমাত্র সম্মেলন হয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর ২০১২ সালের ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ১৪ জুলাই যুবলীগ এবং ১৯ জুলাই কৃষক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ১৭ জুলাই। গত বছরই এসব সংগঠনের কমিটির মেয়াদ তিন বছর পার হয়ে গেছে। নতুন করে সংগঠনগুলোর সম্মেলনের কোনো প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে একমাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে সম্মেলন হচ্ছে বলা যায়। গত বছরের ২৫ ও ২৬ জুলাই সম্মেলন করেছে ছাত্র সংগঠনটি। এছাড়া দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে চলার পর গত বছরের ১৩ নভেম্বর আরেক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সংগঠনের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সম্মেলন আমরা করবো। তবে এখনও তারিখ ঠিক হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সময় দিতে পারবেন, তখনই সম্মেলন হবে। তিনি আমাদের সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর সময় দেওয়ার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।
সম্মেলন কবে হবে জানতে চাওয়া হলে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বাংলানিউকে বলেন, আমরা সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সময় দেবেন, তখনই সম্মেলন হবে। আমরা সংগঠন গুছিয়ে রেখেছি।
এর মধ্যে সম্মেলনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখনও কানো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন ধরে কোনো সম্মেলন হচ্ছে না কেন জানতে চাওয়া হলে অপু উকিল বলেন, আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর একবার সম্মেলন হয়েছে। ২০০২ সালে সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালে আমরা সম্মেলন করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৬
এসকে/এএসআর