ঢাকা: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে দলের নেতারা জানান।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মনোয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অনেক জায়গায় ওই নেতারা অর্থের বিনিময়ে দলের দীর্ঘ দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও যোগ্যদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে নিজেদের লোকদের চেয়ারম্যান পদে মনোয়ন দিয়েছেন।
ফলে অযোগ্য, জনবিচ্ছিন্ন, সমালোচিত ও দলীয় কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই এমন অনেকে মনোনয়ন পেয়ে যান। শুধু তাই নয়, অর্থ দিয়ে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা এবং স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের লোক হয়েও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে যান।
এই মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলার প্রভাবশালী নেতা, কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত মার্চ থেকে শুরু হওয়া সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদে ৬ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে চার ধাপে মোট ২ হাজার ৬৬৯টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ধাপের নির্বাচনেই দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন সংশোধনের পর এবারই প্রথম দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনে তৃণমূল থেকে বাছাই হয়ে আসা প্রার্থীদের নামের তালিকা থেকে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত মনোনয়ন দিচ্ছে। স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বসে দলের একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনীত করে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই স্থানীয় পর্যায়ের মনোনয়ন প্রক্রিয়াতেই অনেকে মনোনয়ন বাণিজ্য করে নিচ্ছেন। বিশেষ করে কোথাও কোথাও এমপিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে এমপিদের যুক্ত করা না হলেও তারা নানাভাবে প্রভাব ঘাটিয়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে নিজেদের লোককে মনোনয়ন পাইয়ে দিচ্ছেন। বিনিময়ে ওই প্রার্থীর কাজ থেকে নগদ অর্থ বাগিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া জেলার প্রভাবশালী নেতা, কোথাও কোথাও কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতাও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা এই অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তারা বলছেন এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ করে থাকলেও থাকতে পারে। অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই দল তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। জড়িতরা দল থেকে বহিষ্কার বা দলীয় পদ হারাতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, এ রকম অভিযোগ আমরা পাইনি। মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ আছে বলে আমাদের জানা নেই। তবে সুনির্দিষ্টভাবে যদি এ ধরনের অভিযোগ ওঠে, এ রকম অভিযোগের যদি কোনো প্রামাণ পাওয়া যায় তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়টি দলের শীর্ষ পর্যায় অবগত হয়েছে। এর সত্যতা আছে কি না বা কারা এর সঙ্গে জড়িত সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওই সূত্র। যাদের বিরুদ্ধ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
সূত্রটি আরও জানায়, এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করা সহজ বিষয় নয় বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ এটা গুরুতর অভিযোগ। এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে। তবে সত্য-মিথ্যা জানি না। কিন্তু এটা প্রমাণ করা সহজ বিষয় নয়। কে, কিভাবে প্রমাণ করবে? কে, কার বিরুদ্ধে প্রমাণ দেবে!
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ/