ঢাকা: দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব ঘটনার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের যোগসূত্র রয়েছে বলে সরকার ও দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
নীতিনির্ধারকদের মতে, দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে উৎখাতের গভীর ষড়যন্ত্র থেকেই পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। শুধু সরকার উৎখাতই নয়, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পেছনে ফেলারও চক্রান্ত রয়েছে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার পেছনে।
সরকার সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের কঠোর অবস্থানের পরও একের পর এক হত্যাকাণ্ড একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে না পারায় দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং সরকারের ওপর এক ধরনের চাপও বাড়ছে। সেই সঙ্গে সরকারের দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষ এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হিসেবে প্রচারে আনার চেষ্টা করছে যা সরকারের জন্য বিব্রতকর।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রথম ৫ মাসে ১৩টি গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গত বছর থেকে এই গুপ্তহত্যা শুরু হয়। লেখক, ব্লগার, শিক্ষক, পুরোহিত, ভিক্ষু, চিকিৎসক, বিদেশি নাগরিক কেউ বাদ যায়নি হত্যার তালিকা থেকে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ধরনও প্রায় একই রকম।
সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্নভাবে সরকারকে অস্থিতিশীল করার তৎপরতা শুরু হয়। এই নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত সর্বশক্তি নিয়োগ করে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি মহল ব্যাপক তৎপর ছিলো। তারা সরাসরি নির্বাচনের বিরোধিতা করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ৫ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়েছে। এই বিচার বন্ধে জামায়াত সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপিও এই বিচারের বিরোধিতা করে আসছে। শুধু তাই নয় বিদেশি কোনো কোনো মহল থেকেও এই বিচারের বিরোধিতা এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি যাতে কার্যকর না হয় সেই চেষ্টাও চালানো হয়।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে এবং অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিলো তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চায় না। ঐতিহাসিক কারণেই দেশি ও আন্তর্জাতিক কোনো কোনো মহল বাংলাদেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে। এই সব গোষ্ঠীর নানামুখী ষড়যন্ত্রের অংশ এই গুপ্তহত্যা।
দেশি ও আন্তর্জাতিক শক্তি মিলে এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ধারণা। এই গোষ্ঠীই দেশের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা উগ্র সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিগোষ্ঠীকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা দিয়ে গুপ্তহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে বলেও তারা ধারণা করছেন।
গুপ্তহত্যার পেছনে কারা রয়েছে, সরকার কী মনে করছে এসব বিষয়ে জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সারা পৃথিবীতেই একটা অস্থিরতা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের সামনে গুলি হয়েছে। বাংলাদেশ তো আর পৃথিবী থেকে বিচ্ছন্ন কোনো দ্বীপ না। বিশ্বের অস্থিরতার তাপ-উত্তাপও এখানে এসে পড়ছে। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে এই সব গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য দেশকে অস্থিতিশীল করা। এটা দেশি ও বিদেশি সহযোগিতায় হচ্ছে। একটা নীল নকশা অনুযায়ীই হচ্ছে। সরকারের বিপক্ষ শক্তি যারা রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট, তাদের মিত্র রয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি রয়েছে। এরা যুদ্ধপরাধীদের বিচার মেনে নিতে পারেনি। তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিও মানতে পারছে না। এই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি মিলে বাংলাদেশকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্র করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ/