ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
বাণীতে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও জাতীয় চার নেতাসহ দলের পূর্বসূরী নেতা-কর্মীদের। যাদের শ্রম, মেধা ও ত্যাগের বিনিময়ে দলটি গণমানুষের বিশাল সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার পর এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৫২’র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২’র আইয়ুবের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪’র দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ১৯৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ মহান মুক্তিযুদ্ধ, যার সবই পরিচালিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন জাতির পিতা তার স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের সংগ্রামে ব্যস্ত, তখনই ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তাকে সপরিবারে হত্যা করে।
আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং নির্যাতন আর নিপীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয় জনগণের সংগঠন আওয়ামী লীগকে। কিন্তু এ অপচেষ্টা কখনই সফল হয়নি।
‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। এই সময়টি ছিলো জাতির ইতিহাসে স্বর্ণকাল। বাংলাদেশ পরিণত হয় দারিদ্র্য দূরীকরণ, দুর্যোগ মোকাবেলা, জাতিগত সংঘাত নিরসন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও উদার গণতন্ত্রের রোল মডেলে। ’
তিনি বলেন, খাদ্য ঘাটতির দেশ বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ সরকারই খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করে। সরকারের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কারও মধ্যস্থতা ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি।
বাণীতে বিগত ও বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, গত সাড়ে সরকার ৭ বছরে দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ উন্নয়ন, পররাষ্ট্র নীতি ও কৌশলসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে।
‘আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.০৫ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মাথাপিছু আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে দেড় কোটি মানুষের। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগ খাতে উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত গভীর সমুদ্র সীমা জয়ের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিরোধী একটি অপশক্তি দেশের সামগ্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু সরকার এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সমূলে উৎপাটন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
‘দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে ও সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেবে- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
এমএ/এইচএ/এমএমকে