ময়মনসিংহ: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। পুরনো সেই ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক’দিন আগে ক্ষমাও চেয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
কিন্তু আসন্ন ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের উপ-নির্বাচনে ফের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন স্থানীয় বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নেতার স্ত্রী নাজনীন আলম।
এরইমধ্যে নিজের পক্ষে প্রচারণাও চালাতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রচারণায় গিয়ে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে শেষতক পিছু হটলেন গৌরীপুর আসনের উপ-নির্বাচনের প্রার্থী নাজনীন আলম।
বুধবার (২৯ জুন) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন তিনি। প্রকাশ্যে সরে এলেও বিষয়টিকে নিয়ে এখনও গোলকধাঁধাঁয় রয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
তলে তলে ভোটের মাঠে তিনি নতুন কোনো ‘স্ট্যান্ডবাজি’ নেন কী-না এ বিষয়টি নিয়েও চলছে নানা জল্পনা।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মূসা বাংলানিউজকে জানান, আগামী ১৮ জুলাইয়ের উপ-নির্বাচনে এ আসন থেকে ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাজিম উদ্দিন, দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী নাজনীন আলম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামসুজ্জামান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফেজ আজিজুল হক, ন্যাপের আব্দুল মতিন ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আবু তাহের খান।
‘এর মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন (বুধবার) বিকেলে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নাজনীন আলম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ’
দলীয় সূত্র জানায়, রাজনীতির মাঠে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নেতা স্বামী ফেরদৌস আলম গত সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই হুট করে নিজের স্ত্রী নাজনীন আলমকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা দেন।
গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকিরের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান গড়েন ফেরদৌস।
অবশ্য এর জন্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন নেতার কারসাজি রয়েছে বলেও ওই সময় অভিযোগ উঠতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান ফকিরের মৃত্যুর পর ১৮ জুলাই উপ-নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয়।
আর এ উপ-নির্বাচনে ফের নিজের স্ত্রীকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান সেই ফেরদৌস আলম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণাও চালান তিনি।
পরবর্তীতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডেকে কথা বলেন। ওই সময় বিগত নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ক্ষমা চান নাজনীন আলম।
কিন্তু ফের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বেঁকে বসেন ফেরদৌস ও তার স্ত্রী। এ ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়েও তাদের অনেক জায়গায় দলের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানায় স্থানীয় সূত্র।
নাজনীন আলমের মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, নেত্রীর কাছে কথা দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নাজনীন আলম আবারও নৌকার বিরোধিতা করে প্রার্থী হয়েছিলেন।
‘এ কারণে তাকে ও তার স্বামীকে নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়ায় আশা করি এ ঘটনায় তার প্রতি ক্ষোভ কিছুটা হলেও কমবে। ’
এসব বিষয়ে উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করা নাজনীন আলম ও তার স্বামী ফেরদৌস আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
এমএএএম/এমএ