ঢাকা: জঙ্গি-সন্ত্রাস প্রতিরোধে সারা দেশে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জঙ্গি প্রতিরোধ তৎপরতার সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জঙ্গি-সন্ত্রাস পুরোপুরি নির্মূলে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনগণকেও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িতদের এবং জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে সরকার ইতোমধ্যেই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। সেই তথ্য অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একে একে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আমাদের যুদ্ধ চলবে। কোনো শক্তি আমাদের থামাতে পারবে না। এখানে কোনো সন্ত্রাস থাকবে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কোনো প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে যারা মানুষের শান্তি নষ্ট করছে সরকার তাদের দমন করছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই।
গত ১ জুলাই গুলশানের আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সারা দেশে তিনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানান।
এর পরই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সারা দেশে জেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়ে নির্দেশ দেয়া হয় বলেও জানা গেছে। এর পর গত ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দ্রুত কমিটি গঠনের তাগিদ দেওয়া হয় এবং এজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের তদারকির নির্দেশ দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ চলছে। সকল পর্যায়ে কমিটি গঠনের পর জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশ করা হবে। ইতোমধ্যে এই সমাবেশের কাজ শুরু হয়েছে। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দিনাজপুরে ১৪ দলের জঙ্গি-সন্ত্রাস প্রতিরোধ সমাবেশ হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে জঙ্গি-সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এসব তৎপরতার মধ্য দিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাস প্রতিরোধে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের সহযোগিতা করছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং কবি, সাহিত্যিক, পেশাজীবীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এই জঙ্গিবাদ বিরোধী তৎপরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ মাবনবন্ধনে অংশ নিচ্ছেন। মানুষের এই অবস্থান দিন দিন আরও দৃঢ় হবে এবং আমাদের উদ্যোগ সফল হবে।
আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কাজ চলছে। রংপুর বিভাগের জেলা, থানা পর্যায়ে গঠন হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করা হচ্ছে। এরপর ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন হবে। সর্বস্তরের মানুষ এই কমিটিতে থাকছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৬
এমজেএফ/