ঢাকা: রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনকে গভীর পর্যব্ক্ষেণে রাখছে সরকার। একই সঙ্গে ওই স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
এরইমধ্যে বাগেরহাটের রামপালে ভারতের কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ১৩শ’ মোগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন যাতে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না হয় সে দিকে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। রামপাল আন্দোলনকে বিএনপি যাতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে না পারে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ না পায় সে ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছে সরকার।
রামপালের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। রামপালের ওই স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবন হুমকির মুখে পড়বে বলে যু্ক্তি দিয়ে প্রকল্প বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। এই আন্দোলনে জাতীয় কমিটির সঙ্গে রয়েছে দেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দল ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন।
সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, এই আন্দোলন দীর্ঘ দিন ধরে চলে এলেও সরকার তা দমনে কঠোর অবস্থান নেয়নি। একটা পর্যায়ে এসে সম্প্রতি এই আন্দোলন গতি পাওয়ায় এবং জাতীয় কমিটি আগামী নভেম্বরে মহাসমাবেশ ডাক দেয়ায় সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তবে বিশেষ করে বিএনপি আকস্মিকভাবে রামপালের বিরোধিতা করে এই আন্দোলনের সমর্থনে কথা বলায় সরকার বিষয়টিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, গত বছরের শুরুর দিকে সরকারের বিরুদ্ধে টানা আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর বিএনপি দীর্ঘ দিন কোনো ইস্যু তৈরি করতে পারছে না। তাই রামপাল নিয়ে বামপন্থিদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মাঠে নামার সুযোগ খুঁজছে। সেই সঙ্গে ভারত বিরোধী পুরোনো রাজনীতিকে সামনে এনে একটি সাম্প্রদায়িক মহলকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে বলেও ওই নীতিনির্ধারকরা মনে করেন। এ কারণে সরকার এই ইস্যুতে আন্দোলনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো।
গত ২৭ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে, সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারিদের কঠোর সমালোচনা করেন এবং আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রামপাল প্রকল্প বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় কমিটি। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার আগ্রহের কথাও জানানো হয়েছে।
এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় কমিটি আগামী ২৬ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। ২৪ নভেম্বর আন্দোলনকারিরা সারা দেশ থেকে পদযাত্রা করে ২৬ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশে অংশ নেবে। এর আগে অক্টোবরে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করবে জাতীয় কমিটি।
সরকার সংশ্লিষ্ট ওই সূত্রগুলো জানায়, আন্দোলনকারিদের সঙ্গে আর কোনো আলোচনায় সরকার যেতে চায় না। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিয়ে সরকার অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে সরকার সরে আসতে চায় না। এরপর বিএনপি এই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানানোয় সরকার আরও কঠোর অবস্থানে চলে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৬
এসকে/জেডএম