ঢাকা: বিএনপি-জামায়াত সরকার নয়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভাগীয় জজ আদালতে একটি দুর্নীতির মামলা চলমান। তবে তিনি এ থেকে অব্যাহতি পেতে আবেদন করেছেন এবং মামলাটি কালক্ষেপণ করানোর জন্য নানা তদবিরও করছেন বলে অভিযোগ।
কিন্তু দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এমন একজন ব্যক্তিই এবার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন, যা নিয়ে অনেক নেতাকর্মী বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
আবদুল মান্নান খান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ ছিল না। অনেক অভিযোগের একটি হলো, তিনি ৭৫ লাখ ৪ হাজার ২৬২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
তার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আবদুল মান্নান খান ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল দুদক সচিব বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। ওই বিবরণীতে তিনি ২ কোটি ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৩১৬ টাকার স্থাবর এবং ৯৩ লাখ ৫ হাজার ৩৬২ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, তার কোনো দায়দেনা নেই। সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনায় দুদকের তদন্ত কর্মকতা দেখতে পান, তার মালিকানাধীন উল্লিখিত মূল্যের স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে কেনা স্থাবর সম্পদের মূল্য ৪১ লাখ ১০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৯২ লাখ ৩০ হাজার ৩৬২ টাকা। তার নিজস্ব অর্থায়নে কেনা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য ১ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ৩৬২ টাকা। অথচ তিনি সম্পদ বিবরণীতে নিজস্ব অর্থায়নে কেনা সম্পদের মূল্য ৯২ লাখ ৩০ হাজার ৩৬২ টাকা উল্লেখ করেছেন। ফলে মান্নান খান দুদকে দাখিল করা বিবরণীতে ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫৯৭ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা একটি মামলা রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। তিনি বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি। মান্নান খানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সম্পর্কে আদালতে দায়ের করা দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, মান্নান খানের মালিকানাধীন ১ কোটি ৩৮ লাখ ১৩৭ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনকালীন তার জ্ঞাত আয়ের পরিমাণ ছিল ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৭৫ টাকা; যা তার ১ কোটি ৩৮ লাখ ১৩৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের জন্য আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে তিনি অসদুপায়ে ৭৫ লাখ ৪ হাজার ২৬২ টাকা মূল্যের মালিকানা অর্জন করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট মান্নান খানের বিরুদ্ধে ৭৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুদক। এর দুই মাস পর ২১ অক্টোবর সৈয়দা হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করে সংস্থাটি। দুটি মামলাই তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন।
সূত্রমতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লিখিত অস্বাভাবিক সম্পদ বিবরণীর সূত্র ধরে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি মান্নান খান দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। নির্বাচনে পরাজিত মান্নান খান হলফনামায় ১১ কোটি ৩ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। অথচ নবম সংসদের হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে পাঁচ বছরে তার সম্পদ বাড়ে ১০৭ গুণ।
হলফনামায় উল্লিখিত অর্থের ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার ২২৭ টাকার উৎস দেখিয়েছেন মৎস্য চাষলব্ধ আয় থেকে। মৎস্য খাত থেকে স্ত্রীর আয় দেখিয়েছেন ৮৫ লাখ টাকা। অথচ দুদক অনুসন্ধানে মান্নান খান কিংবা তার স্ত্রীর নামে কোথাও কোনো মৎস্য খামারের অস্তিত্ব পায়নি। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে জমি বিক্রি বাবদ অর্জিত ২ কোটি টাকার তথ্য তিনি গোপন করেছেন। গ্রামের বাড়ি যে আলিশান ভবন নির্মাণ করেছেন তার অর্থের উৎস এবং মোট ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখ করেন নি আয়কর বিবরণীতে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
জেডএস