খানিক পথ এগুতেই আবার হঠাৎ থেমে গেলো গাড়ি। গ্লাস নামিয়ে এক যুবককে ডাকলেন ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান।
স্বভাবসুলভ আঞ্চলিক ভাষায় মন্ত্রীর মুখে এমন উচ্চারণ শুনে আবেগাআপ্লুত হয়ে ওই যুবক বললেন, ‘এই হচ্ছেন আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার। মন্ত্রী হয়েও যিনি একটুকুও বদলাননি। ’
রোববার (০৮ জানুয়ারি) দুপুরের ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া নয়াপাড়া এলাকার দৃশ্যপট ছিল এমনই। পথ চলতে চলতে আরো কয়েকটি স্পটে প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটলো।
পরিচিত কারো দেখা পেলেই মন্ত্রীর গাড়ি থেমে যাচ্ছে। নাম ধরে তাকে ডাকছেন, খোঁজ খবর নিচ্ছেন। কথাও বলছেন। অল্পকথা শুনেই পুরো বিষয় উপলব্ধি করেন। চেষ্টা করেন সহযোগিতা করার।
সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে বেশির ভাগ সময়ে ঢাকাতেই থাকতে হয় প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানকে। বর্ষীয়ান এ আওয়ামী লীগ নেতা প্রায় সপ্তাহেই নিজের প্রিয় শহর ময়মনসিংহে ছুটে আসেন। দলীয় ও সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেন। স্থানীয় জনসাধারণের জন্য তার দরজা সব সময় খোলা।
বাংলানিউজকে ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়েছি। এমপি হয়েছি, মন্ত্রী হয়েছি। সাধারণ মানুষই আমার প্রাণ, তাদের জন্যই আমার রাজনীতি। জনসাধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা সারা জীবনই ছিল। এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। ’
প্রায় একযুগ ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। ছিলেন ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য। জেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মূল প্রভাবক নেতা হবার কারণেই বিরোধী শক্তির টার্গেটে পরিণত হন তিনি।
২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলা মামলায় গ্রেফতার হন প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। ওই সময় টিএফআই সেলে তাকে অসহনীয় নির্যাতন করা হয়। মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি হয়ে জীবনের সংকটাপন্ন ওই মুহূর্তেও দলীয় আদর্শে অবিচল থেকেছেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত এ সহচর।
মূলত ওই সময় অসহনীয় নির্যাতনে তার শরীর কাহিল হয়ে পড়ে। ৬৯ বছর বয়সী এ প্রবীণ রাজনীতিককে নিজের সমবয়সীদের তুলনায় বয়োবৃদ্ধ বা অসুস্থ মনে হলেও তার প্রাণশক্তি এবং মনের শক্তি বেশ প্রবল।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে মুক্তিযোদ্ধা জনতার বিজয় মিছিলেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পরেও তিনি নিজের জমিতে কাজ করেছেন। গরুর গোয়াল পরিষ্কার করেছেন। নিজেই গাভীর দুধ দহন করেছেন। সাদামাটা জীবন যাপনে এখনও অভ্যস্ত তিনি। তার নিজ এলাকার বাসিন্দারাও জানেন এ খবর।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ফের ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। পরবর্তীতে তাকে টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্মমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মন্ত্রী হিসেবে বড় সফলতা কোনটি জানতে চাইলে প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান বলেন, ‘আমার সময়ে দুইবার সুষ্ঠুভাবে হজ সম্পন্ন হয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবো’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৭
এমএএএম/টিআই