আগামী ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ দিনের সফরে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। এই সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতাসহ অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে ২৪টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমইউ) স্বাক্ষর হতে পারে বলে সরকার-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া আলোচিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ও গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণচুক্তি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না হলেও বিষয়টি আলোচনায় প্রধান্য পাবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
এই বিষয়গুলোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে রাজনৈতিক দিক থেকেও খুবই গুরত্বের সঙ্গে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ সাত বছর পর ভারত সফরে যাচ্ছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সফরকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি।
সম্প্রতি ভারতের কয়েকটি রাজ্য-নির্বাচনে বিজেপি খুবই ভাল করেছে। আগামী নির্বাচনেও মনে হচ্ছে বিজেপিই ক্ষমতায় যাবে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো রয়েছে, আগামীতে সেসবেরও একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে।
এদিকে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতা ও এই সম্পর্কের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে জোরালো সমর্থন দিয়ে আসছে ভারত। ভারতে রাষ্টক্ষমতার পালাবদলের পর নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান অপরিবর্তিত রেখেছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় মোদী সরকারের সময়ই দীর্ঘদিনের পুরনো স্থলসীমানা সমস্যার সমাধান হয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফর করে গেছেন। এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহ ঢাকা সফর করেছেন। এরপর ২০১৩ সালে এসেছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। টানা দুই মেয়াদের সরকারে প্রথম মেয়াদে ২০১০ সালর জানুয়ারিতে ভারত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ভারতের রাষ্ট্রপতি ও দুই প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর শেখ হাসিনা আর ভারত সফরে যাননি।
আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়াদে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বছরই চীন সফর করেন। গতবছর চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ওই সফরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন চুক্তি হয়েছে। সম্প্রতি চীন থেকে কেনা দুটি সাবমেরিনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রথমবারের মতো ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। গত ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী এই সাবমেরিন দুটির কমিশনিং করেন।
সরকার ও আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকরা আরও জানান, ভূ-রাজনৈতিক কারণে অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন এবং ভারত উভয় দেশই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে দুই দেশকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এ সরকার। দুই দেশের সঙ্গেই সমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সমান নৈকট্য বজায় রেখে চলার নীতি নিয়ে সরকার অগ্রসর হচ্ছে।
সেদিক থেকে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফর হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা এবং ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরও জোরদার করার ক্ষেত্রে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। পাশাপাশি ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ভারসাম্যও ঠিক থাকবে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এমনটাই মনে করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
এসকে/জেএম