লাখো জনতার সমাবেশে দাঁড়িয়ে আজ থেকে তিন যুগ আগে জাতিকে যে কথা দিয়েছিলেন, তা পালন করে চলেছেন অক্ষরে অক্ষরে। নিজে সর্বস্বহারা হয়েও দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করার যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তাও পূরণের পথে।
কি তপ্ত রাজপথে, কি দেশ পরিচালনায়- সর্বত্রই সব সময় একই রকম তিনি। সাধারণের মাঝে সাধারণ হয়ে থেকেই অসাধারণ চিন্তা-চেতনা, আদর্শ-দর্শন আর চাওয়া-পাওয়াও একই ধরনের। তা নিহিত শুধুই বাংলাদেশ আর এ দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ, সার্বিক মুক্তির মাঝে।
তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বুধবার (১৭ মে) তার ৩৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৮১ সালের এই দিনে দীর্ঘ প্রায় ছয় বছরের নির্বাসন থেকে দেশে ফেরেন তিনি।
দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা ৩৬ বছর নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন এদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের। এ দীর্ঘ সময় দলের প্রধানের দায়িত্বে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। অনেক চড়াই-উৎড়াই, ঘাত-প্রতিঘাত পার করে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। দেশকেও এগিয়ে নিয়ে চলেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখী-সমৃদ্ধশালী আলোকিত ভবিষ্যতের পথে একটু একটু করে।
শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। এর মধ্যে বর্তমানে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে তার দল। তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রী আরও তিনবার ছিলেন বিরোধী দলের নেতা।
আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পরে ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় বসার পর থেকে যা দৃশ্যমান হতে শুরু করে।
আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেও গেছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার হাত ধরেই উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির মহাসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু তখন দেশে ফিরতে পারেননি তারা।
এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ, দেশ চলে যেতে থাকে পেছনের দিকে। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হন দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও প্রকট হয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।
এ পরিস্থিতিতেই নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান শেখ হাসিনা। ওই বছরের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সর্বসন্মতিক্রমে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শুরু হয় আরেক সংগ্রামী জীবন।
দেশের মাটিতে ফেরার দিন ঢাকায় লাখ লাখ মানুষ তাকে স্বাগত জানান। শেরে বাংলানগরের সমাবেশে লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই’।
সত্যিই জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে বাংলার মানুষের কল্যাণেই অবিরাম কাজ করে চলেছেন তিনি। প্রথমেই তার নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে।
নয় বছরের দীর্ঘ সে আন্দোলন-সংগ্রাম সফল হলেও বাংলার মানুষের স্বপ্ন-সাধ পূরণ হয়নি। দুঃখী বাঙালির ভরসাস্থল হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তাই শেখ হাসিনাকেই অব্যাহত রাখতে হয় আরও পাঁচ বছর। তারপর যদিও বা ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে তুলতে শুরু করেছিলেন, নানামুখী ষড়যন্ত্রে আবারও ছিটকে পড়তে হয়। ফলে নির্বাচিত এবং তত্ত্বাবধায়কের নামে অবৈধভাবে চেপে বসা দু’ধরনের গণবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে আবারও নেমে আসেন রাজপথে। আরও টানা ৮ বছর ধরে মানুষের ভোট-ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করেছেন দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়ে। এরপর থেকে গত প্রায় সাড়ে ৮ বছর ক্ষমতায় থেকে চালাচ্ছেন আর এক ধরনের সংগ্রাম।
তার সফল নেতৃত্বে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ, একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে একাত্তরের মহান চেতনা বাস্তবায়নের দিকে।
সুদীর্ঘ তিন যুগের কণ্টকাকীর্ণ পথচলাকে মসৃণ করার এ যুদ্ধে বার বার হামলা আর হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে।
তারপরও দেশি-বিদেশি হাজারো বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় বড় অর্জন বয়ে এনেছেন শেখ হাসিনাই। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাচ্ছে, যার ধারণাও তিনিই দিয়েছেন। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার নেওয়া কর্মসূচি-দর্শন জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে।
শুধু বাংলাদেশই নয়, বৈশ্বিক নানা সংকট নিয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও শেখ হাসিনার পরিচিতি বেড়েছে। আজ তিনিও হাঁটছেন পিতার দেখিয়ে যাওয়া পথে। ধীরে ধীরে জয় করে নিচ্ছেন দেশবাসীর ভালোবাসা। পরিণত হতে চলেছেন সারা পৃথিবীর মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ বিশ্বনেতায়ও।
শেখ হাসিনা আর বাংলাদেশ তাই আজ বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়নের রোলমডেল।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৬ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
এসকে/এএসআর