আওয়ামী লীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবাষিকীতে দলের সাফল্য কামনা করে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রদীপ রঞ্জন কর বলেন, ২৩ জুন একটি ঐতিহাসিক দিন।
তিনি বলেন, অনেক দায়, দায়িত্ব এবং সুনির্দিষ্ট কতগুলো অঙ্গীকার নিয়ে জন্ম নেয়া আওয়ামী লীগ ৬৮ বছরে পড়েছে। রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সেই অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে রয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং সমাজতন্ত্র তথা শোষণমুক্ত সমাজ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে নাম রাখা হয় 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এই ৬ বছর আওয়ামী লীগ কর্মীদের নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে। দেশের চরম সাম্প্রদায়িক প্রেক্ষাপটকে মাত্র ৬ বছরের মধ্যে আমূল বদলে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের সভাপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি পেশ করে উল্লেখ করেন, 'সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য। পরবর্তীতে ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন আরো জোরদার হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত ‘বজ্র কঠিন শপথ’ চেতনায় ধারণ করে আওয়ামী লীগের সংগ্রামী পথচলা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দলটির সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৭১ সালে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা লাভ। এর আগে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গড়ে বিজয় লাভ, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনে বিজয়সহ গণতন্ত্র ও স্বাধিকার অর্জনের সব আন্দোলন হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।
স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে তার নেতৃত্বেই গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। সেই সঙ্গে শুরু হয় আওয়ামী লীগের নতুন পথ চলা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়ে তিনি যখন দেশটাকে স্বাভাবিক করেন, তখন ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী বিশ্বাসঘাতকের হস্তে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন বঙ্গবন্ধু।
’৭৫-এর পর অনেক ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ যখন কঠিন সময় অতিক্রম করছিল, তখন শেখ হাসিনা দলের হাল ধরেছিলেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। আওয়ামী লীগের পতাকা হাতে তুলে নিয়ে স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করে দীর্ঘ ২১ বছর পর ’৯৬-এ আওয়ামী লীগের পক্ষে গণরায় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসীন হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন হয়। পাঁচ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করে দেশের হারানো গৌরব স্বাধীনতার সুমহান চেতনা পুন:প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেন।
প্রদীপ রঞ্জন কর বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছিল। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব লাভের পর শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের হত্যার বিচার করেছেন।
আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে রাজনীতির পথ পরিক্রমা মসৃণ ছিল না কখনোই। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চলতে হয়েছে সংগঠনটিকে। আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী সবাইকে সাথে নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে আওয়ামী লীগ সফল হবে এটায় সকলের কাম্য।
প্রদীপ রঞ্জন কর বলেন, আওয়ামী লীগই দেশের অগ্রগতি এনে দিয়েছে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ আর প্লাবন, খরা, মঙ্গা ও দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশ নয়। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। এটা কেবল আওয়ামী লীগই পারে। এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের পুনরায় সরকার গঠন করা প্রয়োজন। বিজ্ঞপ্তি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
জেডএম/