দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকলেও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাইছেন আলোচিত-সমালোচিত এ প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
২০০১ সালের ১৭ আগস্ট তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশ ছেড়ে পালান জয়নাল হাজারী।
এরপর ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে আট সপ্তাহের জামিন পান হাজারী। পরে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। চারমাস কারাভোগের পরে ২০০৯ সালের ০২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন তিনি।
কিন্তু ততোদিনে সাজানো-গোছানো সাম্রাজ্য আর তার নেই, হাতছাড়া হয়ে গেছে রাজনৈতিক মাঠ। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে থাকায় ফেনীর রাজনীতিতেও তার প্রভাব অনেকটাই কমে যায়।
এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তারই একসময়ের সহচর নিজাম উদ্দিন হাজারী। জয়নাল হাজারীর সমর্থকরাও যোগ দেন নিজাম হাজারীর তাবু তলে। তারপর থেকে এ জেলায় তার প্রভাব একেবারেই নাই হয়ে যায়।
সোমবার (০৭ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে (Joynal Abedin Hazari) লাইভে এসে রাজনীতিতে ফেরার আকাঙ্খা প্রকাশ করেন ফেনীর সিনিয়র হাজারী হিসেবে পরিচিত একসময়কার গডফাদার জয়নাল হাজারী।
৫১ মিনিটের এ লাইভে তিনি ফেনীর রাজনীতির নানাদিক নিয়েও কথা বলেন। ফেনী-০২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীকে সিন্ডিকেট নেতা আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
লাইভের এক পর্যায়ে জয়নাল হাজারী বলেন, ‘নিজাম হাজারী ঘোষণা দিয়েছেন, সাজানো বাগানে নাকি কাউকে তিনি ঢুকতে দেবেন না’।
নিজাম হাজারীর এমন ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে জয়নাল হাজারী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তিনিই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। নিজাম হাজারী মনোনয়ন পাবেন না- এটা বুঝতে পেরেই এমন ঘোষণা দিচ্ছেন। নিজাম হাজারীর অস্ত্র মামলায় কম সাজা খাটার মামলাটির রায় খুব শিগগিরই হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তিনি সময় ক্ষেপণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায় কেউ পরিবর্তন করতে পারবেন না। আর রায় হলেই নিজাম হাজারী নির্বাচন করার অযোগ্য বলে গণ্য হবেন’।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যার ব্যাপারে জয়নাল হাজারী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলা হয়েছিল ২০ বছর পর। তেমনিভাবে অনেক বছর পরে হলেও একরাম হত্যার প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার হবে’।
ফেনীর বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারা এখন নিজ দলের লোকদের হত্যায় মগ্ন। সম্পদের পাহাড় গড়তে তারা উঠে-পড়ে লেগেছেন’।
জয়নাল হাজারী বলেন, ‘আমিই একমাত্র ফেনীর তিনবারের এমপি। টাকার পাহাড় না গড়ে বরং নিজের বাবার সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করেছি’।
নিজাম হাজারীর সম্পত্তির ব্যাপারে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এমপি হওয়ার আগে নিজামের কিছুই ছিল না। এখন তার শত শত কোটি টাকা কোথা থেকে এলো? রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে তার বাড়ি ও সম্পত্তি। তার আয়ের উৎস কি?’
জয়নাল হাজারী তার লাইভে বলেন, শুধু নিজের জন্যে নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে ফেনীতে মনোনয়ন দেবেন, তার জন্যই তিনি কাজ করবেন। ফেনীর আপামর জনসাধারণ এখনও তাকে ভালবাসেন। আর সে কারণেই এ জনপদেও মানুষের জন্য তিনি কাজ করতে চান।
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল হাজারী ফেনী-২ (সদর) আসনে ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে যে ক’জন সংসদ সদস্য নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচিত ছিলেন, তাদের একজন জয়নাল হাজারী।
** ক্লিক করুন ফেসবুক লাইভে যা বললেন জয়নাল হাজারী
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৭
এসএইচডি/এএসআর