জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে মঙ্গলবার(০৮ আগস্ট) নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অভিমত পেশ করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডটি কোনো ব্যক্তির কিংবা পরিবাবের বিরুদ্ধে ছিল না।
‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় খন্দকার মোশতাকের ভূমিকা কি ছিল?’—এই মর্মে করা প্রশ্নের জবাবে আমির হোসেন আমু বলেন, খন্দকার মোশতাক কোনো সময়ই অসাম্প্রদায়িক কিংবা প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তারপরও তিনি আওয়ামী লীগের বড় দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায় খন্দকার মোশতাক সুক্ষ্ণ কূটচাল চালতে থাকেন। দেশে যখন পুরোদমে যুদ্ধ চলছিল মোশতাক বলাবলি করতে থাকেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে জীবিত পেতে চাইলে দেশ স্বাধীন হবে না। ’
আমরা কৌশল করে বলতাম, ‘দুটোই চাই’।
আমির হোসেন আমু বলেন, ষড়যন্ত্রের কারণে সরকারের পরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় মোশতাককে সাসপেন্ড(আন অফিসিয়ালি) করে রাখা হয়। তখন অলিখিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজ করতেন আব্দুস সামাদ আজাদ। ঐ সময় থেকেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা জোরদার করেন মোশতাক।
তার এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটি প্রমাণিত হয় ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর তিনি বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক দেশে পরিণত করার এজেন্ডা নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন।
হত্যার ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, ১৫ আগস্ট-হত্যাকারীরা প্রথমত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পরপরই সংবিধানে যে জাতীয় চারটি মূলনীতি ছিলো সেটা ছিঁড়ে ফেলে দেয়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে রেডিও বাংলাদেশ রাখে। তৃতীয়ত, ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তিকে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করেছে। চতুর্থত, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করতে চেয়েছে। তাই এরা গোলাম আজমের মতো স্বাধীনতাবিরোধীকে ডেকে এনে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছে।
এরপর যারা ২১ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো তারাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মোশতাকের মতোই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সহযোগিতা করেছে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরই আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারকাজ হাতে নিয়েছিলাম। এরপর ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে বিচারকাজ করতে পেরেছি।
‘বেশ কিছু খুনির এখনো বিচার হয়নি। এর কারণ কি?’- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর খুনি কয়েকজনের বিচার এখনো করা সম্ভব হয়নি। আইন-কানুনের জটিলতায় এখনো গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তবে দ্রুত তাদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
‘৭৫-এর ঘাতকরা বুঝতে পেরেছিল যে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের কোনো উত্তরাধিকারী বেঁচে থাকলে তাদের বিচার হবেই’ উল্লেখ করে আমু বলেন, সেজন্য ১৫ আগস্টে শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করেছে ওরা। সেই দিন বিদেশে থাকায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। তাই শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর এখন পর্যন্ত ১৯ বার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট হামলা এসবের একটি।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতীয় মূলনীতির আলোকে দেশ পরিচালনা করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশিরা বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। আরপিও সম্মেলনে সারা দুনিয়া বাংলাদেশের সংসদকে মর্যাদা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এখন সমাজে সাম্য অবস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এখন বঙ্গবন্ধুর চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৭
এমএফআই/জেএম