শনিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪দলের এক সভায় এ দাবি ও আহ্বান জানানো হয়।
সভা শেষে প্রেস বিফ্রিংয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহম্মদ নাসিম বলেন, মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের দ্রুত সেদেশে ফেরত নিতে হবে।
তিনি বলেন, এই অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মায়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে।
নাসিম আরও বলেন, মানবিক কারণে শেখ হাসিনার সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে এভাবে গণহত্যা চালানোকে আমরা সমর্থন করতে পারি না। মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিচ্ছি। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না, বিরতিহীনভাবে চলতে পারে না। এভাবে রোহিঙ্গারা আসতে থাকলে আমাদের অর্থনৈতিকভাবে সমস্যা দেখা দেবে। সাংস্কৃতিক সমস্যা, আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা দেখা দিবে। অতীতে ওই এলাকা দিয়ে অস্ত্র ও মাদক এসেছে।
নাসিম বলেন, মায়ানমার সরকার তাদের উপর যে নির্যাতন গণহত্যা করছে তা আমরা কোনভাবে সমর্থন করতে পারি না। যে কোনো দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবে। গণহত্যা করে কোনো সমস্যা সমাধান করা যায় না। এটা মানবতার চরমলঙ্ঘন। আমাদের মতো একটা জনবহুল দেশে অন্য একটি দেশের নাগরিকদের আশ্রয় দিতে পারি না। তারা আমাদের দেশের নাগরিক না। মায়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে, নাগরিক অধিকার দিতে হবে। আজ হোক, কাল হোক তাদের ফিরিয়ে নিতেই হবে।
১৪ দলের এই মুখপাত্র আরও বলেন, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে গণতান্ত্রিক শক্তি ও রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসে মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে। যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। আমরা চাই জাতিসংঘসহ অন্যান্য দেশ এগিয়ে এসে কার্যকরভাবে চাপ সৃষ্টি করবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে নাসিম বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য মায়নামারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে বিশ্ববাসীর কাছে আহ্বান করেছেন। আমি আশাকরি এ আহ্বানে সবাই সাড়া দিবে।
বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যর কারণে আজ জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ রোহিঙ্গাদের উপর চলা নির্যাতনের নিন্দা করেছে। বিএনপির কথার কোনো গুরুত্ব নাই, তারা অর্থহীন সমালোচনা করে।
সমগ্র বিশ্ব দেখছে কীভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এই সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করছে। সুতরাং বিএনপি নেতাদের বক্তব্য অর্থহীন এবং অবিবেচকতার পরিচায়ক। জিয়াউর রহমানের সময় ৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করেছে। তারা তো তখন ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা করেনি।
তিনি বলেন, যে কোনো বিষয়কে ইস্যু করা উচিৎ না। এটি একটি মানবিক ইস্যু। এটা নিয়ে কোনো রকম রাজনীতি না করে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা না করে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন। অন্য সময়ে যাই করে থাকুন না কেন এই ইস্যুতে সরকারকে সহায়তা করুন। সমালোচনা করার সময় এখন না এখন সরকারকে সহায়তা করার সময়।
ওয়ার্কাস পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িত। এ অঞ্চল দিয়ে বিভিন্ন অস্ত্রধারী গ্রুপ তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের জাতীয়। নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যাতে নষ্ট না করতে পারে সেই দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারীর সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, জাতীয় পার্টির (জেপি) শেখ শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
১৪ দলের এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতান্ত্রিক পাটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৭
এসকে/এসএইচ