এই ইস্যুটি নিয়ে ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন দফায় আনুষ্ঠানিক আলোচনা হলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তবে এই সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের উপর যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়েছে সেটাকে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখছে সরকার।
সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান, মিয়ানমারে নির্যাতন ও গণহত্যার ঘটনায় সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার এখন পর্যন্ত যে অবস্থান নিয়েছে এবং যে সব কথা বলছে সেটা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্ভব হয়েছে। সরকার আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে মিয়ানমারের উপর এ চাপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে তাতে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারকরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছেন না। মিয়ানমারের পরবর্তি গতিবিধি কি হবে সেটাও স্পষ্ট হতে পারছেন না সরকারের নীতিনির্ধারকরা। আর এটা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা এবং তা আরও জোরালো করার বিকল্প নেই বলে সরকারের এই নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে গত ২১ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং টুনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর বৈঠক হয়।
গত ২৫ আগস্টের পর থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ইস্যুতে এটাই ছিলো প্রথম বৈঠক। এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়। তখন মিয়ানমারের উপদেষ্টা জানান, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনায় বসতে চান। আলোচনার জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর (কার্যত সরকার প্রধান) অং সান সু চির প্রতিনিধি ঢাকায় আসবেন।
এরপর অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে গত ২ অক্টোবর ঢাকায় আসেন। এ সময় মিয়ানমারের মন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে মিয়ানমার রাজি হয়। এরপর ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মিয়ানমার সফর করেন। এসময় অং সান সু চি এবং দেদেশের স্বরাস্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেন। এ সব বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে এবং আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তারা কাজ করছে। মিয়ানমারের এই বক্তব্য ও ভূমিকাকে সরকার ইতিবাচক হিসেবে দেখছে কিন্তু পুরোপুরি আশ্বস্ত বা নিশ্চিত হতে পারছে না। কারণ এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের এই সব পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়ে উঠেনি। তবে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরকার যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তার মুল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। এর জন্য দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক উভয় তৎপরতাই অব্যাহত রাখবে সরকার।
বাংলাদেশ সময় ১৩২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৭
এসকে/এসএইচ