জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ উপলক্ষে নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অ্যামিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংগীত পরিবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া নাগরিক সমাবেশের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গান-‘শোন একটি মুজিবুরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মুজিবুরের স্বরের ধ্বনি’ গান পরিবেশন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ তার লেখা বিখ্যাত কবিতা‘ স্বাধীনতা এ শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ আবৃত্তি করেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমি কাছে থেকে শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। এর ৪৬ বছর পর এই ভাষণ নিয়ে আমার লেখা কবিতা পাঠ করতে আমি গৌরব বোধ করছি।
শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক। এটা পৃথিবীর খুব কম দেশের মানুষই অনুভব করতে পারে। এই ভাষণ না শুনলে, অনুভব না করলে প্রকৃত নাগরিক হওয়া যাবে না। যে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি সেই শত্রু নেই, এখন আমাদের নতুন শত্রু আছে। এই শত্রুকে মোকাবেলা করতে হবে।
দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, আমি সে দিন দৈনিক সংবাদে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু সে দিন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আমরা সংবাদ এর শিরোনাম করেছিলাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি, আপনাকে হারাতে পারবো না। ষড়যন্ত্র চলছে, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।
নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অবলম্বন করে বীর বাঙালি যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে। স্বাধীনতা বিরোধী ও পাকিস্তানি চররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। আজও তারা সক্রিয়। ছদ্মবেশী পাকিস্তানিদের ক্ষমতায় যেতে দেবো না- এই শপথ নিতে হবে।
শিক্ষাবিদ শহীদ জায়া শ্যামলি নাসরিন চৌধুরী বলেন, এই ভাষণে বহুমাত্রিক তথ্য রয়েছে। অষ্টম শ্রেণিতে এই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ১৮ মিনিটের ভাষণ ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে ৬টি ক্লাস নিতে হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে কবিতা ও সংগীত পরিবেশন করা হয়। স্বাধীন বংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পি শাহীন সামাদ নজরুল সংগীত ‘জয় ধ্বনি কর’ পরিবেশন করেন। প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা, ‘আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি’ আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে সাজিদ আকবর রবীন্দ্র সংগীত, ‘তুমি যে সুরের আগুন জ্বালিয়ে দিলে মোর প্রাণে’ পরিবেশন করেন। ভাওয়াইয়া সংগীত, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ পরিবেশন করেন অনিমা মুক্তি গোমেজ এবং গায়িকা মমতাজ।
নাগরিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী, পাকিস্তানের পেতাত্মারা আর যাতে ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ না পায় আজ সেই প্রতিজ্ঞা করতে হবে। নতুন করে সুর্য দেখা দিয়েছে। এই সুর্যই এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে।
সভাপতির ভাষণে এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এখন সারা পৃথিবীর সম্পদ। তিনি পৃথিবীর নানা ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করে ছড়িযে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুক্তিকামী শোষিত মানুষেরও বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ থেকে শক্তি পাবে, অনুপ্রেরণা পাবে। আক্ষরিক অর্থে বঙ্গবন্ধু আমাদের হলেও বঙ্গবন্ধু এখন বিশ্বের। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যৌথভাবে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী আলিম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
এসকে/আরএম/এমএন/এমইউএম/জেডএম