বুধবার (৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি এ আহ্বান জানান। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং দেশের সর্বস্তরের জনতার প্রতি বলবো, এই যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী, আগুনে পুড়িয়ে যারা মানুষ খুন করে, এতিমের টাকা চুরি করে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে, তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, উন্নয়নে বিশ্বাস করেন, জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে বিশ্বাস করেন, তাদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। তারা যেন আর ক্ষমতায় এসে দেশকে ধ্বংস করতে না পারে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের কাছে তুলে ধরতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান।
ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না, ৭ মার্চের ভাষণই তার প্রমাণ
বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বাঙালি জাতির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় একটা ভাষাভিত্তিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিতি লাভ করিয়েছিলেন জাতির পিতা। এই সংগ্রামে তিনি গ্রেফতার, নির্যাতিত হয়েছেন, বারবার বন্দি হয়েছেন। আমাদের যুবসমাজ একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছে। ‘কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন জাতির পিতা। এ অল্প সময়ে একটা দেশকে অনেক দূর নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ঠিক সেই মুহূর্তে (১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট) চরম আঘাত আসে। কী অন্যায় তিনি করেছিলেন? দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। এজন্য তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। ’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর যারা খুনি, জিয়াউর রহমান সেই খুনিদের সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গা দেন, তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করেন, তাদের যেন বিচার না হয়, সেজন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন। একটি দেশে যখন খুন হয়, তখন সবাই বিচার চায়। পৃথিবীর কোনো দেশে এমনকি হতে পারে যে, রাষ্ট্রপতিকে খুন করা হয়েছে, তার বিচার হবে না এমন আইন প্রণয়ন হবে? বাংলাদেশ হয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। জাতির পিতার নামই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়। কিন্তু ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ৭ মার্চের ভাষণই তার প্রমাণ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ’
ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ এ ক্ষমতায় আসতে পারিনি
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ২১টি বছর বাংলার মানুষ বঞ্চনার শিকার হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছিল, জিয়া, এরশাদ, নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ শুরু করে।
‘কিন্তু ২০০১ সালে দেশের সম্পদ গ্যাস বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে আপোসে যাইনি বলে আমরা ভোট বেশি পেলেও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। সেই নির্বাচনে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধর্ষণ-হত্যা-নির্যাতন করেছে। ’
২০০৮ এর নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে মনোনিবেশ করে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচন ঠেকানোর নামে মানুষ পুড়িয়ে মারে বিএনপি
সরকার যখন উন্নয়ন কার্যক্রমে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছিল, ঠিক সেসময় বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারে। পেট্রোল বোমায় ঝলসে দেয়। বাস-ট্রাক-স্কুল-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়েছে। গাছপালা, গবাদি পশুও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও প্রাণ দিতে হয়েছে তাদের হাতে।
এদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের স্থান নেই
শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের কোনো স্থান হতে পারে না। সেজন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার। ছাত্র, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতাদের এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলে দেশের উন্নয়ন চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ফোর-জিতে চলে এসেছি। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। বাংলাদেশকে যেন কারও কাছে ভিক্ষা করতে না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
শিগগির উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাচ্ছে বাংলাদেশ
এসময় যোগাযোগ, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা স্বাবলম্বিতার দিকে এগিয়ে গেছি। কেবল নিজের দেশের মানুষকেই খাওয়ানোর সামর্থ্য লাভ করিনি, মিয়ানমারের যে ১০ লাখ মানুষ নির্যাতিত হয়ে এসেছে, তাদের আশ্রয় দিয়ে খাদ্য দিচ্ছি, সারাবিশ্ব বাংলাদেশের পক্ষে আছে। শিগগির আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেতে চলেছি।
‘অন্য যারা ছিল, তাদের সময় কেন উন্নয়ন হয়নি? তারা তো স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করে না, তারা উন্নয়ন করবে কেন?’ প্রশ্ন ছোড়েন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাংলাদেশে আর কেউ না খেয়ে থাকবে না, দরিদ্র থাকবে না। জাতির জনকের স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৮/আপডেট ১৮৪৭ ঘণ্টা
এসকে/এসএম/এসআইজে/এমএফআই/এমএ/এএম/এসএইচ/এএ/এইচএ/
** পাকিস্তানে আদালতে বসে বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘জয় বাংলাদেশ’
** ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না, ৭ই মার্চের ভাষণ তার প্রমাণ
** আন্দোলন-সংগ্রামেই বাঙালি বারবার বিজয় ছিনিয়ে এনেছে
** সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী
** কাদেরের বক্তব্যে সোহরাওয়ার্দীতে জনসভা শুরু
** ৭ মার্চ নিয়ে মঞ্চে গান গাইলেন মমতাজ
** সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমুদ্র
** সোহরাওয়ার্দীতে নারকেলে মজেছেন দ. আ’লীগের নেতাকর্মীরা!
** সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে জনস্রোত
** ৭ মার্চের আবহে সাজছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান