গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনগত মধ্যরাতে নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোড এলাকায় রহস্যজনকভাবে গুলিবিদ্ধ হন শাওন। পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
সূত্র মতে, এ ঘটনার প্রথম দিকে শাওন নিজের গুলিতেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়লেও পরবর্তীতে রহস্যজট খুলতে থাকে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বেশ কিছু বিষয় সামনে নিয়ে শাওনের তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় দত্ত, ছাত্রলীগ নেতা পিচ্চি আরিফ ও হিমেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
কিন্তু শাওনের পরিবার থেকে কোনো মামলা বা অভিযোগ না করায় তাদের ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে শাওনের প্রথম জানাজায় তার বাবা জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ কুদ্দুস বলেন, ‘হে আল্লাহ যারা শাওনের এ অবস্থা করেছে তাদেরকে তুমি জনগণের সম্মুখে ধ্বংস করে দিও। ’
তার এ বক্তব্যের পরপরই নগরীতে নানা কানাঘুষা শুরু হয়। শাওন যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এ বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুক্রবার (৯ মার্চ) বাদ জুমা জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার লক্ষীপুর এলাকায় দাফনের আগেও একই রকম কথা বলেন শাওনের বাবা।
জানাজার আগে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত প্রমুখ এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শাওন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আমরা জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটকও করেছিলাম। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় ৫৪ ধারায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, আমরা শাওনের বাবা-মা ও পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের সাড়া পাইনি। শাওনের বাবা কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেবেন না বলে আমাদের কাছে গত বৃহস্পতিবার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আবেদন জানিয়েছেন। ফলে ময়না-তদন্ত ছাড়াই তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
ওসি জানান, শাওনের পরিবার অভিযোগ করলে কোনো খুনিকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে শাওনের বাবা এম এ কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিচার চাই না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছি। ’
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ার আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত আমি পোস্টমর্টেম ছাড়াই আমার ছেলের দাফন সম্পন্ন করতে এ আবেদন করেছি। ’
অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ৬৫ কিলোমিটার এলাকা সিসি ক্যামেরা নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হলেও ময়মনসিংহ মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়নি। ফলে আলোচিত শাওন হত্যাকাণ্ডের কোনো ফুটেজ পুলিশের হাতে নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নিবাস চন্দ্র মাঝি বাংলানিউজকে জানান, ময়মনসিংহ নগরীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৮
এমএএএম/এইচএ/