প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, আমি আপনাদের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। আমার একমাত্র লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন করা।
বুধবার (২১ মার্চ) চট্টগ্রামের পটিয়ায় পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করে। তবে এ জনসভা শুধু চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। চট্টগ্রাম মহানগরসহ আশপাশের জেলাগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতার অংশগ্রহণে জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
দুপুর ১২টার পর পরই জনসভাস্থল পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর জেলার প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড, এবং আশপাশের জেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। জনসভার মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকাও পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
লাখো জনতার এ বিশাল জনসভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই দেশের উন্নতি আসবে। আমরা যদি নৌকা মার্কায় ভোট পাই, আমরা যদি আগামীতে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ, আপনারা সবসময় আমাকে সহযোগিতা করেন। আমি আপনাদের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। আমি আপনাদের মাঝে আমার বাবা, মা, ভাইয়ের স্নেহ ফিরে পাই। যেভাবে আমার বাবা আপনাদের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন, আমিও প্রয়োজনে আমার বুকের রক্ত দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে আপনাদের জীবন সুন্দর করবো, এই ওয়াদা করে যাচ্ছি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের অত্যাচার, নির্যাতন, দুর্নীতি-লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি, তাই ২০০১ সালে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়া ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসে। আমাদের গ্যাস আমেরিকা বিক্রি করবে ভারতের কাছে। এটাতে আমি রাজি হইনি, তাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের দেশে পরিণত করে। তারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছিলো। মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন নেমে আসে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, হিন্দু, মুসলমান, শিশু, বৃদ্ধ কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বাংলাদেশ মানে সন্ত্রাসের দেশ, জঙ্গিবাদের দেশে পরিণত হয়েছিল।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। সাধারণ মানুষ, নারী, শিশু, ২৭ জন পুলিশ, বিজিবি সদস্যকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত ৫০০-র বেশি মানুষকে পুড়িয়ে মারে। কোনো মানুষ এভাবে মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারে না। যারা মানুষ তারা এটা করতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ধরা পড়েছিলো। অস্ত্রপাচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলো খালেদা জিয়ার ছেলে (তারেক রহমান)। আজকে তার সাজা হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে। পবিত্র কোরআন শরিফেও আছে, এতিমের হক কেড়ে নিও না। এতিমের সম্পদ লুট করো না, এতিমকে এতিমের ন্যায্য হক দিয়ে দাও। আর সেই কোরআন শরিফের নির্দেশ মানেনি। একটি টাকাও এতিমখানায় যায়নি। সব নিজেরা আত্মসাত করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলা দিয়েছে। সেই মামলায় সে শাস্তি পেয়েছে। রায় দিয়েছে আদালত। কিন্তু কোটের রায় তারা মানতে চায় না। তারা আইন-কানুন মানবে না। তারা জনগণের টাকা মেরে খাবে। এতিমের টাকা মেরে খাবে। এটাই তাদের চরিত্র। আদালত তাকে কেন শাস্তি দিলো সেজন্যই এতো হুমকি-ধামকি আন্দোলন।
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই উন্নয়নগুলো আপনাদের আর্থিক-সামাজিক উন্নয়নে কাজে আসবে। আমরা চট্টগ্রামকে উন্নয়নের আওতায় এনে কাজ করে যাচ্ছি। সারাদেশেই আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশের মানুষ ভালো থাক। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলা করতে পারবে না। একটা মানুষও না খেয়ে থাকবে না। একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমরা দেশের উন্নতি চাই, শান্তি চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আজম নাসির উদ্দিন, চট্টগ্রাম উত্তরের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৮
এসকে/এইচএ/
** নৌকা ভোট পেলেই উন্নয়ন বজায় থাকবে