শনিবার (১৩ অক্টোবর) জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের পর আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ঘটানো এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ছিলেন তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এতিমখানার নামে অর্থ দুনীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেল খাটছেন। আদালতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপি এখন একটি সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের দলে পরিণত হয়েছে। সেই দলকে নিয়ে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ জনগণের মধ্যে নতুন কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে যারা বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটায় তাদের সঙ্গে এ জোট। জোট করেছে এখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে আন্দোলন করুক। নাশকতাই যাদের পুঁজি, দুর্নীতিতে যারা চ্যাম্পিয়ন তাদের সঙ্গে জোট করে তারা কী করবে সেটা দেশবাসী দেখবে, সরকারও দেখবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা আরও জানান, অতীতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে বিএনপি তাদের জোট সঙ্গী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস ও নাশকতা চালিয়েছে। পেট্রোল বোমায় শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে। এখন জামায়াতকে বাদ দিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের কথা বলা হলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটেই জামায়াত রয়েছে। এই জোট বহাল আছে এবং বিএনপিও বলেনি জামায়াতকে বাদ দেওয়া হয়েছে বা জামায়াতও বলেনি দলটি বিএনপির সঙ্গে নেই। কৌশলগত কারণে তারা এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকলেও কেউই অবস্থান পরিবর্তন করেনি। তাদের সঙ্গে এই জোট প্রকৃত অর্থে একটি নীতি আদর্শহীন জোটে পরিণত হয়েছে বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মন্তব্য করেন।
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে এ জোট গঠনের প্রস্তুতি চলাকালেই আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হলে খুনি, দুর্নীতিবাজদের ঐক্য হবে।
শুক্রবার (১২ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত ১৪ দলের এক সভায় বলা হয়েছে বিএনপি সন্ত্রাস লালনকারী রাজনৈতিক দল। বিএনপির সঙ্গে যে ঐক্য হবে সেটা হবে খুনি-সন্ত্রাসী-জঙ্গি ও দুর্নীতিবাজদের ঐক্য।
জোটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, এ ঐক্য নিয়ে আমাদের আগে থেকেই কোনো গুরুত্ব নেই। আমরা জানি এ ঐক্যের কোনো আদর্শ নেই, নীতি নেই। শুধু আওয়ামী লীগের বিরোধিতা আর নির্বাচনকে ঠেকানোর এ ঐক্য। ড. কামাল হোসেন গ্রেনেড হামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা বিএনপি ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছেন।
জোট প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। জনবিচ্ছিন্ন এ দলের সঙ্গে ঐক্য নিয়ে দেশবাসীর কোনো চিন্তা নেই। তারা এটা নিয়ে ভাবছে না।
আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছে। আন্দোলনের নামে তারা বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা, নাশকতা চালিয়েছে কিন্তু কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন দিক থেকে বিএনপি এখন কোণঠাসা এবং চাপের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি নিরুপায় হয়ে ড. কামাল হোসেনের ওপর ভর করেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল হিসেবে কামাল হোসেনের গণফোরামের কোনো গণভিত্তি নেই। এ কারণে তারাও বিএনপিকে ভর করে চলার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ