আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি যে রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়েছে এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট, মহাজোটের পরিধি বাড়বে কিনা তা নিয়েও জোর আলোচনা উঠে এসেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের এলডিপি, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার এনডিএ, জাকের পার্টিসহ কিছু দল নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
এসব দলের নেতারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। আওয়ামী লীগের দিক থেকেও এদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। তবে এ মুহূর্তে নতুন করে রাজনৈতিক জোট বা জোটের পরিধি বাড়ানোর চেয়ে নির্বাচনী আসন সমঝোতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে ১৪ দলের জোট রয়েছে সেটা একটি আদর্শিক জোট। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু কর্মসূচির ভিত্তিতে এ জোট গড়ে উঠেছে। যে দলগুলো আলোচনায় রয়েছে তার মধ্যে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর সঙ্গে মৌলিক কিছু বিষয়ে ১৪ দলের পার্থক্য রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটে নতুন দলের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। দীর্ঘদিন ধরে এক সঙ্গে পথ চলে আসা ১৪ দলের শরিক দলগুলোরও এ ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে। তাদের মতামতকেও আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দিচ্ছে।
১৪ দলের একটি সূত্র জানায়, জোটের পরিধি বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ১৪ দলের সভায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে জোট নেতারা আদর্শিক জোট ১৪ দলের পরিধি না বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। জোটের নেতারা সভায় বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে জোটের পরিধি না বাড়িয়ে যে দলগুলো যোগাযোগ করছে তাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা যেতে পারে।
জোটের পরিধি বাড়ার সম্ভাবনা আছে কি না জানাতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। সময় আসুক, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ১৪ দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, ১৪ দলসহ বৃহত্তর পরিসরে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যে মহাজোট রয়েছে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সেই দলগুলোকে মহাজোটে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। সেটা সম্ভব না হলে এ দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী আসন ভিত্তিক সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে বিষয়গুলো এখনও আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) শেখ রাসেলের জন্মদিনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অলরেডি আমাদের সঙ্গে দেখা করেছে জাকের পার্টি, সাত দলীয় একটা বাম জোট অফিসে এসে একটা আবেদন রেখে গেছে। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে চায়। ইসলামী ফ্রন্টের বাহাদুর শাহ, তিনিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্যে শামিল হতে চান। প্রতিদিনই দুই-একটা দল আবেদন বা দেখা করে তারা তাদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করছে। তবে আমরা এখনো এ বিষয়ে মুখ খুলছি না। সবার কথা শুনছি। আমাদের নেত্রী দেশে ফিরলে কার্যনির্বাহী সংসদে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কাকে আমরা জোটে নেব, কাকে নেব না। আমাদের অলরেডি এদিকে ১৪ দল, ওইদিকে জাতীয় পার্টি আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ