মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা ফের আলোচনার বিষয়টি ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তারা যদি চান তাহলে আমাদের জানাতে পারেন।
শুক্রবার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দোগাছি এলাকায় ভিজিটরস সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার কথা প্রথমে আমরা দলের লোকজন ভাবতে পারিনি। আমাদের মধ্যে ভিন্ন মত ছিল বিএনপির ব্যাপারে, থাকাটাও খুব স্বাভাবিক। তারপরও আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমাদের সবার আস্থা রয়েছে নেত্রীর ওপর। তিনি যা করবেন জাতীয় স্বার্থে করবেন। তিনি নিজের ওপর অপমান, তার জীবনের ওপর হামলার বিষয়গুলো ভুলে গিয়ে জাতীয় স্বার্থকে, গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। সংলাপ ৮ নভেম্বর পর্যন্ত হবে। কাল জেলহত্যা দিবস তাই কাল হবে না। ঐক্যফ্রন্টের ডা. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে মির্জা ফখরুল, রব এসেছিলেন। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে খোলামেলা পরিবেশে আলোচনা হয়। কেউ কেউ দুই-তিন বার বক্তব্য রেখেছেন। ভালো আলোচনা হয়েছে। তারা চাইলে আবারো আলোচনা হতে পারে। দূরত্বটা বহুদিনের। টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট আছেই। সেনসিটিভ কিছু ইস্যু। বিএনপি আমলে ২১ আগস্টের মতো নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, আইভি রহমানসহ ২২টি প্রাণ ঝড়ে গেছে। তারপরও আমরা কম্প্রোমাইজ করেছি। আমরা জানি, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে বর্বরোচিতভাবে সপরিবারে হত্যার কথা। সে হত্যাকারীদের যারা পুরস্কৃত করেছেন এবং যারা পঞ্চম সংশোধনী করে হত্যাকারীদের বিচার হবে না- এ রকম বিষয় অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন সংবিধানে, তারপরও আমরা পলিটিক্স করি, একটি ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকা আবশ্যক। খালেদা জিয়ার সন্তান কোকোর মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা ছুটে গিয়েছিলেন সান্তনা দিতে। কিন্তু খালেদা জিয়া দেখা করলেন না। শুধু দেখা না করাই নয়, মূল ফটক, ভেতরের দরজাও বন্ধ করে দিলেন। প্রধানমন্ত্রী অপমানজনকভাবে ফিরে এলেন। এতে সম্পর্কের তিক্ততা কোথায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে?
সংলাপের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। অপজিশন কীভাবে রিঅ্যাক্ট করে সেটা তাদের ব্যাপার। আমি তো মনে করি না, এখানে ব্যর্থতার কিছু আছে। শুরুটা ভালো হয়েছে। তাদের সাত দফার তিনটি বিষয়ে আমাদের কোনো বাধা, আপত্তি থাকবে না। শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। দীর্ঘদিনের গ্যাপ, লং ডিস্টেন্স, এটাকে রাতারাতি ম্যাজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন সম্ভব না, ক্লোজ করাও সম্ভব না। কিন্তু গতকাল কিছু বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মামলা রয়েছে, ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া শুধু রাজনৈতিক কারণে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আমার কাছে তাদের তালিকা পাঠাতে বলেছি। সে তালিকা অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে, যোগ করেন মন্ত্রী।
পদ্মাসেতুর মূল অংশের ৭১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ৯৩০০ বর্গফুটের ভিজিটরস সেন্টারের মাল্টিপারপাস হলের আসন সংখ্যা ১২০। ইনডোর ও আউটডোর ক্যাফের ক্যাপাসিটি ১০০। এছাড়া একটি ভিআইপি কক্ষ ও একটি সভাকক্ষ রয়েছে।
সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬০ ভাগ। সেতুর পিলারের নকশা নিয়ে যে সমস্যা ছিল বৃহস্পতিবার তা দূর হয়ে গেছে।
ভিজিটরস সেন্টার সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীর সব বড় বড় প্রকল্পে একটি ভিজিটরস সেন্টার থাকে। কারণ, বড় প্রকল্পে অনেক দর্শনার্থী আসে। এখান থেকে ভিজিটররা অনেক কিছু জানতে পারবে ও নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারবে।
সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে মূল সেতুর ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৮২টি পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর দুই প্রান্তের দু’টি ট্রান্সিশন পিয়ারের ৩২টি পিয়ারের সবগুলো পাইল শেষ হয়েছে। মূল সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ১২টি পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে এবং ২১টির কাজ চলছে। মাওয়া সাইটে মোট ১৭টি ট্রাস এসেছে যার মধ্যে পাঁচটি স্থায়ীভাবে ও একটি অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের ৩৫৬টি ভায়াডাক্টের সবগুলো পাইল বসানো হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের ৪৭টি পিয়ারের ১৮টি শেষ হয়েছে এবং ২৯টির কাজ চলমান। মাওয়া প্রান্তে ভায়াডাক্টের ৪১টি পিয়ারের মধ্যে ছয়টি শেষ হয়েছে এবং ৩৫টির কাজ চলছে। নদী শাসনের মোট ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মোট ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে তিন কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে, সংযোগ সড়কের কাজ সব শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৮
এসআই