পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা এ আশাবাদের কথা জানান। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৭ ডিসেম্বর আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশ হয়েছে সাক্ষাৎকারটি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের জনগণের ওপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হবো। ’
৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে আগে-পরে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোটও দিয়েছিলেন তারা। সেই জনগণ আবার আমাদের ভোট দেবেন। ’
নির্বাচন ঘিরে বিএনপিসহ বিরোধীদের অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নালিশ করার পাশাপাশি বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং মিথ্যা কথা বলতে তারা ভীষণ পারদর্শী। তাছাড়া মনোনয়ন নিয়ে নিজেদের মধ্যেই সংঘাতে জড়িয়েছে তারা। ’
দেশের তারুণ্য আওয়ামী লীগের বিষয়ে উৎসাহী বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দেশের মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই মুছে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এর জেরে আওয়ামী লীগের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মতটাই পাল্টে গিয়েছে। ’
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নিজের সফরে জনগণের সাড়া পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ভালবাসা দেখতে পেলাম! তারা অন্তর থেকে চাইছেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানেন, আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে। তাছাড়া, এবারের নির্বাচনটা আগের মতো অতো চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরিতার পরিবেশও নেই। বরং আমাদের পক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ করতাম। এবার কিন্তু একচেটিয়াভাবে সবার সমর্থনটা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সেটা টেরও পাচ্ছি। ’
দেশে এখনো কিছু পাকিস্তানপ্রেমী আছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের মন পড়ে আছে পাকিস্তানে। তবে আমরা সতর্ক। কারও সঙ্গে বৈরিতা করতে না চাইলেও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে কোনোভাবেই নাক গলাতে দেবে না বাংলাদেশ। ’
লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আসামিরা সবসময় বিদেশে বসে দেশের ভেতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। অস্ত্রপাচার, চোরাকারবার এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত সেসব মানুষের অঢেল টাকা। ক্ষমতায় ছিল যখন, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ না করলেও নিজেদের আখের তারা গুছিয়ে নিয়েছে। সেই টাকা এখন ব্যয় করে দেশের ভেতরে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে। ’
ব্রিটেনের সঙ্গে কথা বলে ওই আসামিদের দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকর করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এবারের নির্বাচনে জামায়াতের নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করলো তাদের, তাদের কিভাবে নমিনেশন দেওয়া হয়? জামায়াত গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। মেয়েদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে ঘর-বাড়ি পর্যন্ত দখল করেছিল। তাদের নমিনেশন দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শঙ্কিত!’
ড. কামাল হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তিনি কি-না গেলেন জামায়াত-বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে! আমি অবাক হইনি। কারণ কী জানেন? তার শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে। ছেলেদের একটু শ্বশুরবাড়ির টানটা বেশি থাকে। ’
ভোটের ফল কেমন হবে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ‘ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম, আমরাই আসছি। কারণ, মানুষ আমাদেরই চাইছেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
এইচএ/