শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি, এটা অব্যাহত থাকবে।
‘কারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে, কারও ভোগ-বিলাসের জন্য এটা ব্যয় হবে না। কেউ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করবেন, বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন, আর যে সৎভাবে জীবনযাপন করবেন তিনি সাদাসিধে জীবনযাপন করে তার জীবনটাকে নিয়ে কষ্ট পাবেন, এটা কিন্তু হতে পারে না। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরিয়ানি-পোলাও খাওয়ার চেয়ে বা কোনো ব্র্যান্ডের পোশাক পরার চেয়ে সাদাসিধে জীবনযাপন করা অনেক অনেক সম্মানের। অনেক সম্মানের। অন্তত সারাক্ষণ ঐ অবৈধ চোরা টাকা এটা মনে আসবে না। শান্তিতে ঘুমানো যাবে। ’
টাকা বানানোর নেশাকে রোগ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে টাকা বানানো একটা রোগ, এটাও একটা ব্যাধি, এটা একটা অসুস্থতা। একবার যে টাকা বানাতে থাকে তার শুধু টাকা বানাতেই ইচ্ছে করে। ’
‘কিন্তু ঐ টাকার ফলে ছেলেমেয়ে বিপথে যাবে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা নষ্ট হবে। মাদকসক্ত হবে সেটা দেখারও সময় নেই- টাকার পেছনে ছুটছেতো ছুটছেই। আর নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। কাজেই এই ধরনের একটা সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সৎ পথে কামাই করে যে চলবে সে সম্মানের সঙ্গে চলবে, সৎ পথে কামাই করে যে থাকবে সে সমাজে সম্মান পাবে। ’
দুর্নীতিবাজদের মানুষ গালি দেয় সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চোরা টাকা, দুর্নীতির টাকা, অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে যতই বিলাসিতা করুক, মানুষ মুখে হয়তো খুব বাহবা দেবে, পেছনে একটা গালি দেবে- যে এই ব্যাটা দুর্নীতিবাজ, চোর। সেই গালিটা হয়তো শোনা যাবে না, বোঝা যাবে না। কিন্তু সেই গালিটা খেতে হয়। এই কথাটা মনে রাখতে হবে। ’
নেতাকর্মীদের জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা সারাজীবন সাদাসিধে জীবনযাপন করে গেছেন। যারা তার আর্দশের সৈনিক তাদেরকে সেভাবেই চলতে হবে। ’
‘আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে জনগণের জন্য কতটুকু আমরা করতে পারলাম, সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণকে কী দিতে পারলাম সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণের কল্যাণ কিসে হবে সেই চিন্তা করতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের কথা বলেছেন তাদের ভাগ্য কতটুকু গড়তে পারি, তাদের কতটুকু সুন্দর জীবন দিতে পারি, মানুষের ভাগ্য সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আর সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছি বলেই আজকের বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পাচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা যদি ওরকম বিলাসবসনে গা ভাসাতাম, এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতো না। এই বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পেতো না। ’
‘এই সম্মানটা ধরে রাখতে হবে। আগামীতে যারা নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন, নেতৃত্বে আসবেন তাদের সেই কথাটাই মনে রাখতে হবে যে, আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। যে ত্যাগের মহিমা জাতির পিতা দেখিয়ে গেছেন সেই পথ ধরে চলতে হবে। ’
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে জানিয়ে টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ যেন আর কখনো পেছনে ফিরে না তাকায়, বাংলাদেশের অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়, সুশৃঙ্খল জীবন পায়, সমৃদ্ধশালী জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ’
‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আর কখনো কোনো হায়নার দল বাংলাদেশের মানুষের বুকে চেপে বসতে পারবে না। আর তাদের রক্তচুষে খেতে পারবে না। আর কোনো দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী, আগুন নিয়ে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে তারা আর কখনো এদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। ’
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশন শেষ হয়। বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে (কাউন্সিল অধিবেশন) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
এমইউএম/জেডএস