গত ২৫ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এরপর তিন দফায় ছুটি বাড়িয়ে আগামী ৫ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।
নভেল করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে ব্শ্বিজুড়ে মহামারি হয়ে দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৮২ জন। এদের মধ্যে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার পাঁচশ ১১ জনের রয়েছে মৃদু সংক্রমণ। তবে ৫৮ হাজার পাঁচশ ২৩ জনের অবস্থা গুরুতর। বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ছয় ৮৯ জন। এদের মধ্যে মারা গেছে একশ ৩১ জন। এছাড়া সুস্থ হয়েছে ১১২ জন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ মার্চ তৈরি জাতিসংঘের একটি ইন্টার ডিপার্টমেন্টাল রিপোর্টে আশঙ্কা করা হয় জনসংখ্যার ঘনত্বের বিবেচনায় করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাতে পারেন। জনসংখ্যার ঘনত্ব ও মানুষের সচেতনতা বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও-হু) বার বার সতর্ক করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় কোনো দেশ তড়িঘড়ি করে লকডাউন তুলে দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলেও হু ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে।
গত এক মাস হলো করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি চলছে। নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ নিলেও পুরোপুরি তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এক শ্রেণীর মানুষের বাইরে চলাফেরা, তৎপরতা লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি দিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। সেসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
এদিকে সাধারণ ছুটির কারণে দিন মজুর, খেটে খাওয়া, দরিদ্র মানুষের অসহায়ত্ব বেড়ে চলেছে। তারা পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কোনো কোনো দিক থেকে সাধারণ ছুটি বা লকডাউন সিথিল করা বা তুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা মনে করছেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে লকডাউন তুলে দেওয়ার মতো অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। শারীরিক দূরত্ব ধরে রাখতে না পারলে করোনা সংক্রমণে ভয়াবহতার যে আশঙ্কা রয়েছে সেটা দূর হবে না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও তা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেই। পরিস্থিতি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। এই মুহূর্তে লকডাউন শিথিল করা হলে সংক্রমণ আরও বেড়ে সংকট বড় আকার ধারণ করতে পারে।
তাদের মতে, যেহেতু প্রতিদিনই শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তাই বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয়। করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কোনো পর্যায়ে রয়েছে সেটা দেখে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, ভৌগলিক, জনসংখ্যার, স্বাস্থ্য সচেতনতা এই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করতে হবে। এসব বিবেচনা করেই সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে এখনো যে পরিস্থিতি তাতে লকডাউনের মধ্যেই আরও থাকতে হবে, সতর্কভাবে চলতে হবে। বিশ্বব্যাপী এখনো লকডাউন চলছে। কিছু কিছু দেশে শিথিল করেছে, সেটা করেছে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসার পর। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও আমাদের গরিব, খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট হচ্ছে। ভয়াবহতার আশঙ্কাও বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের দেখতে হবে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কোনো পর্যায়ে, ৫ মে পর্যন্ত কি পরিস্থিতি হবে, এসব দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে লকডাউন তুলে দেওয়ার প্রশ্ন উঠে না। কারণ পরিস্থিতি এখনো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতার কারণে আমাদের এখানে পরিস্থিতি সহনশীল পর্যায়ে আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে লকডাউন তুলে দিলে সংক্রমণ আরও বেড়ে সংকট বড় আকার ধারণ করতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক অবস্থা, জনসংখ্যা, ভৌগলিক অবস্থান, সামাজিক অবস্থাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। সরকার পরিস্থিতিকে একটা শক্ত ব্যবস্থাপনার মধ্যে রেখেছে। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। লকডাউন এক ধরনের বাধ্যতামূলক আটকে রাখা। কিন্তু আমাদের দেশে লকডাউন হয়নি। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় লকডাউন হয়েছে। যে পরিস্থিতি বিবেচনায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিলো সে পরিস্থিতি এখনো অব্যাহত আছে। সেজন্য সরকার ছুটি বাড়িয়েছে।
বাংলাাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২০
এসকে/এএটি