শনিবার (০৪ জুলাই) রাতে করোনাকালীন সংকট নিয়ে বিশেষ ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্যা প্যানডেমিক’ এর নবম পর্বে ‘করোনা সংকট মোকাবিলায় তৃণমূলের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন তারা।
এবারের পর্বে আলোচক হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে কথা বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, ভোলা- ৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করে রিলিফ কার্যক্রম কমিটি গঠন, রিলিফ প্রদানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। সাধারণ মানুষকে সচেতন করা থেকে শুরু করে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কার্পণ্য করেনি। দুর্দিনের নেতাকর্মীরা মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে রিলিফ কার্যক্রম এখন পর্যন্ত পরিচালনা করছেন।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দেশ ও দলের দুর্দিনে আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীরা বারবার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সমগ্র আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের এই দুর্দিনের নেতাকর্মীরাই সবার আগে এগিয়ে এসেছেন এবং আমাদের দলীয় জনপ্রতিনিধিরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের পাশে থেকেছেন, এখনও আছেন। করোনামুক্ত বাংলাদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত তৃণমূলসহ আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ও জনপ্রতিনিধিরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জনগণের পাশে আছেন এবং থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন। এছাড়া আমাদের সব স্তরের জনপ্রতিনিধিরা নিজস্ব এলাকায় সরকারি ও ব্যক্তিগর উদ্যোগ মিলিয়ে মানুষের পাশে থেকেছেন। আমরা কেন্দ্র থেকে সবকিছু সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি।
সারাদেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন বলেও জানান আফজাল হোসেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হলো অসহায় মানুষের পাশে থাকা, পাশে দাঁড়ানো, মানুষকে সহায়তা করা। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আলোচনায় যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুনিপুণ নেতৃত্বে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন ইতোমধ্যে তিনি সব গ্রহণ করেছেন।
আজম নাসির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫০ শয্যা নিয়ে আমরা করোনার চিকিৎসা শুরু করেছিলাম, ধীরে ধীরে শয্যা সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সেখানে এখন ১৬০টি শয্যা রয়েছে, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১০ শয্যার আইসিইউ সেবা, চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ও প্রথমে স্বল্পসংখ্যাক বেড নিয়ে শুরু করলেও এখন সেখানে ১৫০টি আইসোলেশন সেবাসহ আইসিইউ সেবা চালু হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আরো একাধিক হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারের নির্দেশে এখন সেবা দিচ্ছেন।
ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, এই দুর্যোগে যেভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত দ্বীপ জেলা ভোলাবাসীর খোঁজ নিয়েছেন, আমি তার কাছে ভোলা-৪ আসনের জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। করোনা সংকটের এই মহামারিতে চিকিৎসকরা কাজ করে যাচ্ছেন, আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখছি। আমরা অনেক দুর্যোগ দেখেছি, কিন্তু করোনার মত নতুন দুর্যোগ এই বারেই প্রথম। নতুন এই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা একেবারে প্রস্তুত ছিলাম না, কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করছি এই সংকট মোকাবিলায়।
জ্যাকব বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। আমরা উপকূলীয় লোকজন দুর্যোগে যেভাবে সংগ্রাম করে এখানে বেঁচে থাকি তা সবসময়ই আপনারা জানেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়। ঈদকে সামনে রেখে আমরা কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য ও ঈদ উপহার পৌঁছে দিয়েছি। আমি মনে করি, দুর্যোগে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে সবসময় ছিলেন ও থাকবেন।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জনপদ পাইকগাছা কয়রায় করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আমরা কাজ করেছি। আজকে এই করোনার সময়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আমার দুই উপজেলার নেতাদের নিয়ে।
তিনি বলেন, আমাদের ১০টি ইউনিয়ন এখনো আংশিক পানিবন্দি। ২টি ইউনিয়ন পানিতে আটকে আছে। আমাদের বেড়িবাঁধগুলো অনেক পুরানো। কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধ হয় নাই। এবার কয়েক শত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলিন হয়ে যায়, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে নিজ উদ্যোগে কাজ করেছি সবাই মিলে। জনগণের সঙ্গে নিয়ে সংকটের এই দিনে আমরা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন আমাদের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দেবেন। উপকূলের মানুষ ত্রাণ চায় না বেড়িবাঁধ চায়।
কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ আমরা ইতোমধ্যে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। করোনা মোকাবিলায় আমরা একে অপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি। আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা তৃণমূলের মানুষদের পাশে ছিলাম সবাই মিলে।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, কৃষকদের পাশে আমরা সবসময় আছি এবং থাকবো। ১৯৮৪ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চলমান রেখেছে বাংলাদেশ কৃষক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন। সারাদেশে মুজিব বর্ষে এক কোটি গাছ লাগাবে বাংলাদেশ কৃষক লীগ।
কোভিড-১৯ এর এই মহামারির এই সময়ে ২৫ হাজার ৫৩৩ শতক জমির ধান আমাদের কৃষকলীগের নেতাকর্মীদের সাহায্যে কাটা হয় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২০
এমইউএম/এএটি