ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বন্ধের আশঙ্কায় মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১২
বন্ধের আশঙ্কায় মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি

ঢাকা: ঝুলে গেছে মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি উন্নয়ন প্রস্তাব। শিগগিরই উন্নয়ন কমর্সূচি শুরু করা না গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশের একমাত্র এ পাথর খনি।



খনি সূত্র জানিয়েছে, পাঁচটি স্টোপ নিয়ে ২০০৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনে যায় মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, ৫টি স্টোপের পাথর ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফুরিয়ে যাবে।

নতুন করে ৫টি স্টোপ উন্নয়নে কমপক্ষে ২ বছর সময় প্রয়োজন পড়বে। সে হিসেবে এখনই নতুন স্টোপ উন্নয়নের কাজ শুরু করা প্রয়োজন। আর তা করা না হলে, ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যাবে খনিটির উৎপাদন।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানোয়ার হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, উন্নয়ন প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্টোপ তৈরি না হলে ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আরো ২ থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত পুরনো স্টোপ থেকেই পাথর পাওয়া যাবে। সময় ফুরিয়ে যায়নি, তবে দ্রুতই কাজ শুরু করা প্রয়োজন। ”

২০১০ সালে প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরও এতদিন কেন ঝুলে আছে সে প্রসঙ্গে সানোয়ার হোসেন চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে ভালো বলতে পারব না। ”

খনির একাধিক কমর্কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, খনিটিতে পাথরের বিশাল মজুদ থাকলেও যেসব স্টোপ থেকে পাথর তুলে আনা হচ্ছে, এসব স্টোপের পাথর ২ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

নতুন স্টোপ থেকে পাথর উত্তোলনে যন্ত্রপাতি স্থাপন, রোডওয়ে নির্মাণ, খনি থেকে পাথর তুলে আনার ট্রেন লাইন বসানো, লোডিং ব্রিস্ট, ভেন্টিলেশন, পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

খনিটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, মন্ত্রণালয় দীর্ঘ দিন ধরে প্রস্তাবটি ঝুলিয়ে রাখার পর পিপএস ( প্রিপিডিবিলিটি স্ট্যাডি) করতে বলে। তাদের সেই চাওয়া অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, শুরু থেকেই লাভের মুখ দেখতে না পারায় সরকারকে নতুন করে বিনিয়োগে ভাবতে হচ্ছে। তবে ওই সূত্রটি দাবি করেছে, মৌলিক কিছু বিষয়ে পরিবতর্ন আনা গেলেই মুনাফা নেওয়া সম্ভব।

সূত্র মতে এক শিফটের পরিবর্তে তিন শিফটে উৎপাদন আর সরকারি বিভিন্ন কাজে এই খনির পাথর ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলেই মুনাফায় পাওয়া সম্ভব। এছাড়া প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুকেন্দ্রীক বিশাল বাজার তৈরি হওয়ায় সমূহ সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়া খনিটি কোনো সময়েই মুনাফার দেখা পায়নি। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে লোকসান দিয়েছে ২৭ কোটি ২৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ২৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬ হাজার টাকা, ২০১০-১১ অর্থ বছরে লোকসান দিয়েছে সর্বনিম্ন ৮ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

উৎপাদিত পাথরের মধ্যে প্রায় সোয় চার লাখ মে. টন পাথর অবিক্রিত পড়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবিক্রিত রয়েছে বড় পাথর (৮০ মিলিমিটারের উর্ধ্বে) যা পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইড বাঁধের দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় এবং ৫ মিলিমিটারের নিচে যা সিমেন্ট তৈরিতে বেশি ব্যবহার হয়।
 
সূত্র জানিয়েছে, খনিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে ২০১০ সালে ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপজাল) জমা দেওয়া হয়।

৩৪০ কোটি টাকার ডিপিপি পেট্রোবাংলার বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়ে জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয় ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, “খনি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে। ”

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তোফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, খনি উন্নয়ন প্রস্তাব সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। যথাসময়ে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।