ঢাকা : ঝুলে গেছে পূর্বাচল তৃতীয় প্রকল্প। প্রকল্পটির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে।
জানা যায়, গেল বছর রাজউক এই প্রকল্পটিতে প্লট বরাদ্দ দেয়। ২০১৩ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আজ অবধি কাজ শুরুই করতে পারেনি রাজউক।
প্রকল্প সম্পর্কে পূবার্চল প্রকল্প পরিচালক আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্ত নানা সমস্যার কারণে প্রকল্পটির উন্নয়ন কাজ শুরু করতে পারছি না। ’
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে এলাকার বাড়িঘর, স্থাপনা অপসারণ করতে হবে। কিন্ত এলাকাবাসী তাদের নিজেদের বাড়িঘর ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। রাজউকের লোক দেখলেই তারা লাঞ্ছিত করছে। এমনকি মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। তারপরও আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। ’
প্রকল্পটির আয়তন এক হাজার ৬০০ একর। এতে ১০ কাঠা, সাড়ে সাত কাঠা, পাঁচ কাঠা ও তিন কাঠার মোট ছয় হাজার প্লট রয়েছে।
রাজউকের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১১ সালে লটারির মাধ্যমে এই ছয় হাজার প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু লটারির পর এলাকাবাসী প্রকল্পটির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে।
একটি রিট নিষ্পত্তি হলে আবারো রিট করে এলাকাবাসী। এভাবে এ পর্যন্ত রাজউক কয়েকটি রিট মোকাবেলাও করেছে। তবে সবকটি রিটেই উচ্চ আদালত রাজউকের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ৮ মে কালীগঞ্জের বরকাউ গ্রামের কামরুল আহসান সুমন, পারাবর্তা গ্রামের খোরশেদ আলম ও পূর্ব তলনা গ্রামের মকবুল হোসেন প্রকল্পটির বিরুদ্ধে আরও একটি রিট করেছেন। তাই ঝুলে গেছে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ।
এরই মধ্যে এ রিটের কাগজপত্র রাজউকের হাতে এসেছে।
আবেদনকারীরা রিটে উল্লেখ করেছেন, রাজউকের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাস্তুভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। এছাড়া রাজধানী ঢাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত নয়।
রিটে আরও বলা হয়েছে, নগরীর আশপাশে খালি জায়গা, জলাশয় রক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ এসব এলাকা নগরীর ফ্লাড জোনে অবস্থিত। রাজউক এসব এলাকা ভরাট করলে ওই এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তাই প্রকল্পটি বন্ধের জন্য এলাকাবাসী উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রাজউক জানায়, এটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশগত কোনো সমস্যা হবে না। বরং এলাকাটির উন্নয়ন হবে। সেখানে সুন্দর ও পরিকল্পিত একটি আবাসিক এলাকা গড়ে উঠবে। এখন এই এলাকায় ১০ হাজার লোক বাস করে। আবাসিক এলাকা গড়ে উঠলে সেখানে মার্কেট, দোকানপাট, বিপণি বিতানসহ নানা অবকাঠামো গড়ে উঠবে। এখন যারা এর বিরোধিতা করছেন তারাও উপকৃত হবেন। তাই প্রকল্পটির বাস্তবায়নে এলাকাবাসীর কাছে সহায়তা চেয়েছে রাজউক।
প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা ও গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানা এলাকায় মোট ছয় হাজার একর ভূমি নিয়ে গড়ে উঠছে পূর্বাচল তৃতীয় প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটিই হবে বাংলাদেশের পরিকল্পিত সর্ববৃহৎ প্রকল্প এবং একটি পূর্ণাঙ্গ শহর। যেখানে থাকবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কেট, বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, বিনোদন স্পট, খেলাধুলার মাঠ এবং মসজিদসহ বিভিন্ন অবকাঠমো।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প মোট ৩০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। রূপগঞ্জে ২৩টি সেক্টর আর সাতটি হবে কালিগঞ্জ এলাকায়।
সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ ১৯৯৫ সালের জুন থেকে শুরু হয়ে ২০১০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার টার্গেট ছিল। বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০০৩ সালে। সে অনুযায়ী এটি শেষ হওয়ার পরবর্তী টার্গেট নির্ধারণ করা হয় ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। আর প্লট হস্তান্তর শুরু হওয়ার কথা ছিল প্রথমে ২০০৯ সালের জানুয়ারি, পরে তা পরিবর্তন করে ২০১০ সালের নভেম্বর।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১২
এআর/রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]