ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

দুই লাখ নারী পাবেন প্রশিক্ষণ, ১৬ হাজার কিশোরীর জন্য সাইকেল

এসএমএ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
দুই লাখ নারী পাবেন প্রশিক্ষণ, ১৬ হাজার কিশোরীর জন্য সাইকেল

ঢাকা: নারীদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ কারণে নারী শিক্ষা, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শুরু করা হচ্ছে।



প্রকল্পগুলো হলো- ১. বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য সাইকেল। ২. উপজেলা পর্যায়ে আয়ের জন্য প্রশিক্ষণ। ৩. পাটপণ্য বৈচিত্র্যকরণের জন্য নারীদের উন্নত প্রশিক্ষণ। ৪. গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ও ৫. আইসিটিভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প।

ইতোমধ্যে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই পাঁচ প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। বৃহত্তর লিঙ্গ সমতার কৌশলের অংশ হিসেবে দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা সৃষ্টি, প্রযুক্তির সহজলভ্যতার ওপর গুরুত্ব প্রদান এবং টেকসই উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে, যা জাতীয় অগ্রাধিকার এবং বৈশ্বিক লিঙ্গ সমতার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও জাতীয় মহিলা সংঘ।

প্রতিটি প্রকল্প বিশেষভাবে নারীদের সামনাসামনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, গ্রামাঞ্চল ও অবহেলিত অঞ্চলের নারীদের শিক্ষিত এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সামাজিক গতিশীলতা অর্জনে প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য সাইকেল

‘কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের সাইকেল প্রদান’ প্রকল্পটির লক্ষ্য ৬ষ্ঠ শ্রেণি ও তার ওপরের স্কুলগামী কিশোরী মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো। এই প্রকল্পটি ৮টি জেলার ৫৯টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। জেলাগুলো হলো- শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, সাতক্ষীরা, পাবনা, হবিগঞ্জ, ভোলা, গাইবান্ধা ও শেরপুর।

প্রকল্পের মোট বাজেট ২৪ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা এবং এটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং নিয়মিত স্কুল উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

১৬ হাজার মেয়েকে সাইকেল দিয়ে তাদের স্কুলে যাতায়াত সহজ করা হবে এবং এর মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাবে, যা নারীকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

উপজেলা পর্যায়ে আয়ের জন্য প্রশিক্ষণ নারীদের

‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পটির লক্ষ্য ১৮-৪০ বছর বয়সী ২ লাখ ৮ হাজার ৩২০ জন নারীকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা। এর মোট বাজেট ৩৩৬ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা এবং এটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি নারীদের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের আয় সৃষ্টির দক্ষতা উন্নত করবে।

এছাড়া, নারীকে মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করা হবে এবং সহিংসতা, শিশু বিবাহ এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন করা হবে।

পাটপণ্য বৈচিত্র্যকরণের জন্য নারীদের উন্নত প্রশিক্ষণ

‘নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে পাটজাত পণ্য বহুমুখীকরণে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ’ প্রকল্পটি ৩ হাজার ৭৫০ জন নারী উদ্যোক্তা নিয়ে কাজ করবে। প্রকল্পটি ৩১ দশমিক ২৩ কোটি টাকায় বাস্তবায়িত হবে এবং এটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি নারীদের পাটপণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত করার জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পাটপণ্য ব্যবহারের প্রচার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ

‘গ্রামকেন্দ্রিক নারীদের কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ’ প্রকল্পের বাজেট ৪২৫ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি ১ লাখ ৫০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান উন্নয়ন করবে। এটি ৯৩টি উপজেলায় পরিচালিত হবে এবং ৬ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করবে। প্রকল্পটি নারীদের জীবিকা উন্নয়ন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি, গ্রামীণ অঞ্চলে লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে।

আইসিটিভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প

‘নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন’ প্রকল্পটির লক্ষ্য ২৫ হাজার নারীকে আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা। এই প্রকল্পের বাজেট ২৫৫ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা এবং এটি ২০২৫ থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত চলবে। প্রকল্পটি নারীদের স্বনির্ভরতা এবং মুক্ত পেশায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে, বিশেষত ফ্রিল্যান্সিংয়ে। এছাড়া সফল প্রশিক্ষণার্থীদের ৫ হাজার ল্যাপটপ এবং ২ হাজার নারীর জন্য ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্প গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন এবং শহরের ওপর নির্ভরতা কমানো বাংলাদেশের সার্বিক অন্তর্ভুক্ত উন্নয়নে সহায়ক হবে। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করবে এবং নারীদের কর্মশক্তিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
এসএমএকে/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।