ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

চিড়িয়াখানার বেহাল দশা-০৩

১৫০ কোটি টাকার জমি বেহাত

আহমেদ রাজু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১০
১৫০ কোটি টাকার জমি বেহাত

ঢাকা: ঢাকা চিড়িয়াখানার ১৫ বিঘা জমি বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক বাড়ি।

এ জমির বাজার মূল্য ১৫০ কোটি টাকা। নানা চেষ্টা করেও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বেহাত জমি উদ্ধার করতে পারছে না।

চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. এবিএম শহিদ উল্লাহ বাংলানিউজকে এ কথা বলেছেন।

কিউরেটর বলেন, দখলকৃত জমি উদ্ধার করতে গিয়ে আমার ওপর অনেক হুমকি এসেছে। হুমকি এখনো আসছে। কিন্তু আমি কোনো হুমকিকেই পরোয়া করিনা। কোনো বাধার কাছেই আমি মাথা নত করবো না। সরকার আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালনে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাবো।  

ডা. শহিদ উল্লাহ আরো বলেন, আমরা জমি উদ্ধার করতে গেলে দখলদাররা উল্টো মামলা করে চিড়িয়াখানার বিরুদ্ধে। তাই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। সরকারি জমি আমরা উদ্ধার করেই ছাড়বো।
 
চিড়িয়াখানার মূল্যবান ওই জমি দখল সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ জানায়, জোট সরকারের আমলে চিড়িয়াখানার দক্ষিণ দিকের লেক পাড়ের ওই জমি দখল করে নেয় গণপূর্ত হাউজিং এসোসিয়েশন। বর্তমান বাজার মূল্যে ওই জমির দাম ১৫০ কোটি টাকার বেশি। দখলকৃত জমি তারা প্লট আকারে বিক্রি করেছে বিভিন্ন লোকের কাছে। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক বাড়ি।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগে ওই বাড়িগুলো উচ্ছেদ করতে গেলে বাড়ির মালিকরা বাধা দেয়। ফলে উচ্ছেদ না করেই ফিরে আসেন চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা।

এ ঘটনার পর বাড়ির মালিকরা তাদের বাড়ি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়িগুলো না ভাঙতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

তাই বাড়িগুলো ভাঙতে পারছে না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, আগে চিড়িয়াখানার ৮০ একর এলাকা ছিলো অরক্ষিত। চারদিকের তিন পাশেই দেয়াল ছিলো না। সন্ত্রাসী ও এলাকার প্রভাবশালীদের লোকেরা ভেতরে ঢুকে পড়তো।

এ ছাড়াও চিড়িয়াখানার জমি দখল করে বস্তিঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়ে ছিলো সন্ত্রাসীরা। কর্মকর্তারা বাধা দিলে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। দখলকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীরা চিড়িয়াখানার কয়েক কর্মকর্তাকে মারধরও করেছে। তাই সীমানা দেওয়াল না থাকাটা ছিলো চিড়িয়াখানার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

নিরাপত্তার স্বার্থেই চারপাশ দিয়ে দেওয়াল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সরকার সীমানা দেওয়াল দিতে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মঞ্জুর করে। মাস তিনেক আগে চিড়িয়াখানার চারপাশ দিয়ে দেয়াল নির্মাণ শুরু হলে প্রভাবশালীরা এতে বাধা দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দরা জমির মালিকানা দাবি করে ভুয়া রেকর্ড দেখায়। পরে সরকারের নির্দেশে জেলা প্রশাসক চিড়িয়াখানার সীমানা নির্ধারন করে।

সীমানা নির্ধারণের সময় দেখা যায় দক্ষিণ লেকের পাড়ে ৫ একর জমি দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করেছে গণপূর্ত বিভাগের লোকেরা।

কর্তৃপক্ষ জানায়, চিড়িয়াখানার বড় একটি অংশ এখনো দেওয়াল দেয়া সম্ভব হয়নি। সেখান দিয়ে বহিরাগতরা এখনো প্রবেশ করতে পারে। তা ছাড়া যে অংশ টুকু দেওয়াল দেয়া হয়েছে তা একেবারেই নীচু। দেওয়াল টপকে প্রায় প্রতিদিনই বহিরাগত ভেতরে প্রবেশ করে। তাই চিড়িয়াখানা এখনো হুমকির মধ্যেই রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছক চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা জানান, সন্ধ্যার পর এলাকার সন্ত্রাসীরা ভেতরে ঢুকে পড়ে। কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদকদ্রব্য সেবন করে।

বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পরও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘন্টা, ০২ নভেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।