ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ফলাফল শিক্ষাঙ্গন ছাড়িয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। দুই ছাত্র সংসদেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির।
গত ৯ ও ১১ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে ডাকসু ও জাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলাপ-আলোচনা তুঙ্গে ছিল। বিশেষ করে গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর বিএনপিসহ বিভিন্ন দলে নির্বাচনী আমেজ দেখা দিয়েছিল। সেই বৈঠক ঘিরে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ভেতরে নতুন করে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জোর দিয়ে কথা বলেন রাজনৈতিক নেতারা। তখন অবশ্য জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচনের চেয়ে জুলাই সনদ, পিআর পদ্ধতিসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে বেশি কথা বলতে দেখা যায়।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করলে জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনায় ভাটা পড়তে শুরু করে। অনেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কারচুপির অভিযোগ তুলে জাতীয় নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন। এছাড়া শিক্ষাঙ্গনের ভোটের হিসাব জাতীয় ভোটে প্রভাব ফেলবে কি না এমন নানা বিশ্লেষণ শুরু হতে থাকে। অবশ্য জামায়াতের নেতাদের এখন নির্বাচনকেও অগ্রাধিকার দিয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তারা ডাকসু-জাকসুকে নিজেদের জনপ্রিয়তা হিসেবে দেখিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছেন দাবি আদায়ে। তুলে ধরেছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে আয়োজনসহ পাঁচ দাবি।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ডাকসু-জাকসুর ফলাফলের পর দলটির অনেক নেতা-কর্মী কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছেন, যা মাঠ পর্যায়ের আলোচনায়ও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কেন্দ্র পর্যায়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা এবং আলোচনা কমে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, জাতীয় রাজনীতিতে জামায়াত-শিবির একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, যা বিএনপির ভোটব্যাংকে প্রভাব ফেলবে। এটি তাদের মধ্যে ‘ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক মেরুকরণ’ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মী জানান, শিবির সমর্থিত প্রার্থীদের অপ্রত্যাশিত বিজয় তাদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের পর থেকে কর্মীদের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আগের মতো উদ্দীপনা দেখছি না। অনেকেই মনে করছেন, এই নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করতে পারে, যা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। ’
একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধকরণ এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের দুর্বলতার সুযোগ বিএনপি সমর্থিত ছাত্রদল কাজে লাগাতে পারেনি। তারা মনে করছেন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং কার্যকরী নেতৃত্ব সংকটের কারণে ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের জয় হাতছাড়া হয়েছে, যা দলের সামগ্রিক জাতীয় নির্বাচন কৌশলের ওপর প্রশ্ন তুলেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির একজন নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, ডাকসু-জাকসুতে অন্তত একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি হবে, যা জাতীয় নির্বাচনের আগে কর্মীদের মনোবল বাড়াতো, কিন্তু এই ফলাফল আমাদের মধ্যে এক ধরনের নেতৃত্বহীনতা ও কৌশলগত বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ’
‘বিএনপি পূর্ণোদ্যমে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে’
অবশ্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রস্তুতির কথাই বলছেন জোর দিয়ে। এরই মধ্যে ২০০ আসনে প্রার্থী হিসেবে সবুজক সংকেত দেওয়ার খবরও প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি পূর্ণ উদ্যম ও প্রস্তুতি নিয়েই জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই ঐক্যবদ্ধ এবং নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে। ’
রিজভী আরও বলেন, ‘কিছু মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে যাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। ’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদও একই সুরে কথা বলেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংসদের নির্বাচন দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি বিচার করা ঠিক নয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্য পুরোদমেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ’
অন্যদিকে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের নিরঙ্কুশ বিজয় তাদের সাংগঠনিক শক্তি এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। এই বিজয় জামায়াত ও শিবিরের মধ্যে এক প্রকার চাঙ্গা ভাব এনেছে। তাদের নেতারা এই ফলাফলই জাতীয় নির্বাচনে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন। প্রস্তুতিও নিচ্ছেন সেভাবে। আগের মতো নির্বাচন ইস্যুটাকে আর পিছিয়ে রাখছেন না। সম্প্রতি বিভিন্ন টক-শো ও আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও প্রতিনিধিদের বক্তব্যে যে আত্মবিশ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা সরাসরি শিবিরের সাম্প্রতিক সাফল্যের প্রতিফলন বলেই অনেকে মনে করেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। আমরা জানি ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য সব রাজনৈতিক দল প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি প্রার্থী ঘোষণা করেও আমাদের দল কাজ করছে। মূলত ঐকমত্য কমিশনে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয় যে আলোচনা চলছে এটা বার্নিং ইস্যু। আমার ধারণা এই বিষয়ে সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো একটু অপেক্ষা করছে। এটার সমাধান হলে সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের হাওয়া-হাল বোঝা যাবে। ’
নির্বাচনী আমেজ তৃণমূলে
এদিকে মফস্বল বা তৃণমূলের রাজনীতিতে সচেতন মহল ডাকসু-জাকসুর ফলাফলকে দেখছেন ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে। কেউ বলছেন এই ফলাফল জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে না। আবার কেউ বলছেন তা ভোটারের মনস্তত্ত্বে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বেশিরভাগই নির্বাচনে আমেজে থাকার কথা জানিয়েছেন।
রাজধানীসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় ভাটা পড়লেও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও চলছে আগের মতোই। স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিয়ত গণসংযোগ করছেন সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। জনসমর্থন বাড়াতে তারা জনগণের দ্বারে দ্বারে ছুটে চলেছেন।
জুলাইযোদ্ধা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের এম.এ এর শিক্ষার্থী মো. আহাদ হোসেন (আয়মান আহাদ) বাংলানিউজকে বলেন, ডাকসু-জাকসুর সাম্প্রতিক নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনার ধারা সমাজের ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে সচেতন মহলে এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ নিয়ে গ্রামীণ বা অরাজনৈতিক পরিসরে তেমন আলোচনা নেই। তাদের কাছে দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহের সমস্যা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জাতীয় রাজনীতির বড় প্রশ্নগুলোই বেশি প্রাসঙ্গিক।
খুলনা বিএল কলেজ শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের পর গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভোটের আমেজ তৈরি হয়েছে৷ বহুদিন পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় গ্রামের চায়ের দোকানগুলোতে ভোট নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে এ নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেল জয়লাভ করলেও কেউ কেউ ছাত্রসংসদ ও জাতীয় নির্বাচন এক মনে না করায় অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে এগিয়ে রাখছে৷ এজন্য সবমিলে মনে হচ্ছে, শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনী একটি হাওয়া বইতে শুরু করবে।
খুলনার রয়্যালের মোড়ের বাসিন্দা জি এম রাসেল ইসলাম বলেন, ডাকসু-জাকসু নির্বাচন দিয়ে জাতীয় নির্বাচন মূল্যায়ন করা যায় না। জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে এটা মনেও করি না। তবে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা আবারও চালু হওয়ায় আমরা সাধারণ ভোটার আনন্দিত।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট মহানগর শাখার সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা আতিকুর রহমান নগরী বলেন, ডাকসু-জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে মুখে মুখে আলোচনা ছিল। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হলেও জনমুখে এসব নির্বাচনের আলোচনা নেই।
মো. শামীম আহমেদ নামে মাদারীপুরের এক কলেজশিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন ভিন্ন বিষয়। এখানে পুরো দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আসে। এখনো জামায়াতকে ওভাবে অনেকেই পছন্দ করে না। তবে তাদেরও ভোট বেড়েছে। মাদারীপুরে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব নেই। বিএনপি সার্বিকভাবে মাঠে রয়েছে। তাদের সভা-সমাবেশ হচ্ছে। অন্যান্য দলও করছে। তবে বিএনপিতে লোকজন বেশি। কট্টর আওয়ামী লীগ ছাড়া অনেকেই বিএনপির দিকে ঝুঁকছে।
চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কেএম সালাউদ্দিন বলেন, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের পরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চাঙ্গা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কিনা এটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে যে সংশয় ছিল তা কেটেছে।
চাঁদপুর জেলা যুবদলের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইয়াছিন ইকরাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা কমেছে। তবে সাধারণ মানুষ চায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন, এমন আলোচনা অনেকের মুখে।
চাঁদপুর শহর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান খান বলেন, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবশ্যই প্রভাব পড়বে। নির্বাচনী আলোচনা এখন অনেক বেড়েছে। সাধারণ মানুষের আমাদেরকে বলছেন তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে চায়। নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে সাধারণ মানুষ।
চাঁদপুর জেলা জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট জেলার সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন লিটন বলেন, নির্বাচনী আলোচনা এখন চাঙ্গা। কারণ বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন আসনে ইতোমধ্যে অনেক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। তারা যেন নিজ নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ বাড়ায়।
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. হারুন অর রশিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের ফলাফলে সবার দৃষ্টি ছিল। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফল বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সতর্কতা বেড়েছে। তাদের আগামী নির্বাচনকে কোনোভাবেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু বলেন, ডাকসু বা জাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। ক্যাম্পাস ছোট একটা ক্ষেত্র আর দেশে কোটি কোটি ভোটার। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের মানুষ অতোটা ভাবছে না।
‘তরুণদের পরিবর্তনশীল মানসিকতা বুঝতে হবে দলগুলোকে’
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের মতে, ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের পর জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনার কৌশলগত পরিবর্তন আসতে পারে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, এই নির্বাচনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। তারা মনে করছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে যে তরুণ সমাজের মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শের প্রভাব বাড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে তরুণদের এই পরিবর্তনশীল মানসিকতা এবং তাদের চাহিদাগুলো বোঝা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোর ফলাফল জামায়াতকে জাতীয় রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হতে উৎসাহিত করবে। তারা হয়তো এখন নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করবে, যা বিএনপির জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। ’
তিনি আরও জানান, যদি তরুণ ভোটারদের মধ্যে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে জাতীয় নির্বাচনে এর একটি পরোক্ষ প্রভাব দেখা যেতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডাকসু-জাকসুর নির্বাচনে শিবিরের জয় জামায়াতের জন্য আত্মবিশ্বাসের নতুন দুয়ার খুললেও বিএনপির জন্য এটি এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ। জাতীয় নির্বাচনের বাস্তব সমীকরণে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের সরাসরি প্রভাব সীমিত হলেও মাঠপর্যায়ের আলাপ-আলোচনায় যে ভাটার সুর শোনা যাচ্ছে, তা বিএনপির মনোবল ধরে রাখার প্রশ্নে বড় পরীক্ষাই বটে।
এসবিডব্লিউ/টিএ/এইচএ/