ঢাকা: রাষ্ট্রীয় গোপনীয় কাগজপত্র প্রতিমাসে পুড়িয়ে ফেলার নিয়ম থাকলেও সে নিয়ম মানার কোনো বালাই নেই। আর এ কারণে সরকারের অনেক গোপনীয়তা ঝুঁকিতে পড়ছে।
সরকারি খসড়া কাগজের অনুলিপি পুড়িয়ে ফেলার জন্য সচিবালয়ে পশ্চিম পাশের দেওয়াল ঘেঁষে তিনটি চুল্লী রয়েছে। সূত্র জানায়, গত তিন বছর ধরে এগুলোর কোন ব্যবহার নেই। আর এগুলো যে ব্যবহার করা হচ্ছে না তাও জানা নেই খোদ কর্তাব্যক্তিদের। এ অবস্থায় অনেক গোপনীয় কাগজপত্র না পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে না।
এসব কাগজ কি হচ্ছে জানার চেষ্টা করা হলে অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে ফেরিওয়ালাদের কাছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “কয়েক বছর আগেও প্রতি মাসে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে ৮০ থেকে ৯০ কেজি গোপনীয় খসড়া কাগজপত্র আমাদের কাছে আসতো। পরে এগুলো পোড়ানো হতো। অথচ গত ৩ বছর ধরে সরকারের কোনো দপ্তর থেকে কাগজপত্র পাঠানো হচ্ছে না। ”
অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন সচিবালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীরা। তারা বলছেন, চুল্লী তিনটিতে আগুন জ্বালানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কাগজপত্র এর পাশে স্তূপ করে রাখা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগের প্রতিদিনের খসড়া কাগজপত্র জড়ো করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই পোড়ানোর কথা।
সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ময়লা-আবর্জনায় চুল্লীগুলোর চারপাশ ভরে গেছে। অব্যবহারের সুযোগে চুল্লির দেয়ালে গজিয়ে উঠেছে গাছ-পালা।
এবিষয়ে সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, চুল্লির বিষয়টি আমার মন্ত্রণালয়ের আওতায় নয় বলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়। ’
নিজের মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও গোপণীয় নথি কিভাবে ধ্বংস করা হয় জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব বলেন, নথিগুলো শ্রেণী বিন্যাস সচিবালয়ের নির্দেশনা মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই নথিগুলো শ্রেণীবিন্যাস করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান কামাল আবদুল নাসের।
এদিকে সচিবালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গোপনীয়তার অভাবে চুল্লী ঘর থেকে সবচেয়ে বেশি পাচার হয়ে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের খসড়া অনুলিপি।
পুলিশ বিভাগের ঊচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইদানিং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আগাম প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আইন-শৃংখলা ও বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে, চুল্লীঘর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত গণপূর্ত বিভাগের একজন সেকশন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিভিন্ন দপ্তর থেকে কাগজ পোড়ানোর জন্য পাঠানো হচ্ছে না বলে এগুলো জ্বালানো হয় না। ”
তবে এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের ইডেন ভবন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-প্রকৌশলী কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার দেখা পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১০