ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

সাক্ষাৎকার:

ইউনূস সাহেব এটা খারাপ কাজ করেছেন-জেবল হোসেন

হাসান আজাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১০
ইউনূস সাহেব এটা খারাপ কাজ করেছেন-জেবল হোসেন

চট্টগ্রাম থেকে ফিরে: নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর নরওয়ের অসলোর সিটি হলে নোবেল অনুষ্ঠানে যৌথভাবে গ্রামীণব্যাংকের সঙ্গে পুরস্কার গ্রহণ করেন। ড. ইউনূসকে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়ার আগে তার গ্রামীণব্যাংকের প্রতিষ্ঠা কিভাবে হয়েছে, এই ব্যাংকের মাধ্যমে কিভাবে দারিদ্র বিমোচন হয়েছে, কারা উপকৃত হয়েছেন তার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয় আগত অতিথিদের।



চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কিউরেটর শামসুল ইসলাম বাহাদুর এই প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করেন।

গ্রামীণব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রামাণ্যচিত্রে মূলত গ্রামীণব্যাংকের প্রথম ঋণগ্রহীতা সুফিয়া খাতুনের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। এই প্রামাণ্যচিত্রে সুফিয়া খাতুনের পাশের একটি দোতলা বাড়িকে তার বাড়ি বলে প্রচার চালিয়ে ওই প্রামাণ্যচিত্রে উল্লেখ করা হয় গ্রামীণব্যাংকের ঋণ নিয়ে সুফিয়া খাতুন তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করেন।

প্রামাণ্যচিত্রের ওই বাড়িটির মালিক হচ্ছেন সুফিয়া খাতুনের ভাতিজা দুবাইপ্রবাসী জেবল হোসেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন। আর এ সময়ে আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে সুফিয়া খাতুনকে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন সম্পর্কেও তিনি অবহিত আছেন। গ্রামীণব্যাংকের ‘মিথ্যাচার’, সুফিয়া খাতুনের আর্থিক অবস্থাসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন জেবল হোসেন।

হাটহাজারীর থানাধীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত জোবরা গ্রামে সুফিয়া খাতুনের বর্তমান ভাঙ্গাচোরা বাড়িতে বসেই তার সঙ্গে কথা হয়:

বাংলানিউজ: আপনার সঙ্গে সুফিয়া খাতুনের সম্পর্কটা কি?
জেবল হোসেন: উনি আমার চাচী হন। মারা গেছেন অনেক দিন আগে। এখন তার দুই মেয়ে ও তাদের সন্তানরা সুফিয়ার বাড়িতে থাকেন।

বাংলানিউজ: মারা যাাওয়ার আগে আপনার চাচির আথির্ক অবস্থা কেমন ছিল?
জেবল হোসেন: খুবই খারাপ। আমিতো বিদেশে ছিলাম। যতটুকু পেরেছি সাহায্য করেছি। মৃত্যুর আগে উনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করতেন।

বাংলানিউজ: নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানে আপনার চাচির কথা বলা হয়........(প্রশ্ন শেষ না করতেই )
জেবল হোসেন: আমি জানি। কয়েকদিন ধরে আমাদের এখানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ড. ইউনূসের প্রথম ঋণগ্রহীতা সুফিয়া খাতুনের বাড়ি খুঁজতে অনেক দেশি-বিদেশি সাংবাদিক এসেছেন। তারা সবাই সুফিয়ার বাড়ির ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। আপনারাও এলেন। এতে কোন লাভ নেই।

বাংলানিউজ: লাভ নেই কেন বলছেন?
জেবল হোসেন: সুফিয়া খাতুনের পরিবারকে আর কেউ সাহায্য করবে না। তার মেয়েরা এখন ভিক্ষা করে। তাদের ছেলেরা রিক্সা চালায়। এক মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না টাকার অভাবে। সুফিয়া খাতুনকে নিয়ে একটা ভিডিওতে আমার বাড়িকে সুফিযা খাতুনের বাড়ি বলে দেখানো হয়েছে। আমি দুবাইতে বসে পত্রিকায় সে ছবি দেখেছি। এ নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। যদি সুফিয়া খাতুনের পরিবারের কিছু হত। কিন্তু ইউনূস সাহেব নোবেল পেয়েছেন, আর সুফিযা খাতুন ভিক্ষা করতে করতে মারা গেছেন। তার কবরও দেয়া হয়েছে মানুষের টাকায়।

বাংলানিউজ: তাহলে আপনি বিষয়টিকে কিভাবে বিবেচনা করছেন?
জেবল হোসেন: বিবেচনা কি করবো। ইউনূস সাহেব এটা খারাপ কাজ করেছেন। তিনি অনেক বড় মাপের মানুষ। আর্ন্তজাতিক মানুষ। উনার এটা করা ঠিক হয়নি। গ্রামীণব্যাংকের লোকেরা তাদের নিয়ে পেপার পত্রিকায় লেখালেখি হলেই চাকরি দেবে বলে আশ্বাস দেয়। কিন্তু পরিবারের কাউকেই এখন পর্যন্ত চাকরি দেয় নাই।

বাংলানিউজ: এক্ষেত্রে করণীয় কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
জেবল হোসেন: আমি বিদেশে থাকি। ক’দিনের জন্য দেশে আসি। আমি দেশে যদি থাকতাম তাহলে কিছু একটা করতাম। আর আমার চেয়ে দেশে অনেক জ্ঞানী লোক আছেন তারাও বিবেচনা করবেন। এটা এখন জাতীয় বিষয়। সরকারের উচিত বিষয়টির সমাধান করা।

বাংলাদেশ সময় : ১১২০, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১০।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।